• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দ্রব্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজারেও বাড়ছে রমজানের পণ্যের দাম


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩, ০৯:৫৮ পিএম
দ্রব্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজারেও বাড়ছে রমজানের পণ্যের দাম

প্রতি বছরের মতো এবারেও থেমে নেই রমজানের পণ্যের দাম। এবার রমজান শুরুর মাসখানেক আগে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। রোজা শুরু হওয়ার সপ্তাহ বাকি থাকলেও দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা থেমে নেই এখনো। সবজি ও চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নতুন করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। রোজার প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা।

সরজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এবারে রমজানের সব ধরনের পণ্যই চওড়া দামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। অনেকে বাজার করতে দামের এমন ঊর্ধ্বগতি দেখে পরিমাণমতো বাজার না করেই বাসায় ফিরছেন।

ব্যবসায়ীরা জানায়, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে গত বছরের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি। গত বছর রমজানে ছোলার দাম ছিল প্রায় ৭০ টাকা। এখন কেজিপ্রতি এই পণ্যের দাম ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।

রমজানের শুরুতে ছোলার দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন, আমদানি কম হওয়ায় খুচরা বাজারে বেড়ে যাবে সব ধরনের পণ্যের দাম।

পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় মান ভেদে কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। গত বছরের তুলনায় চিনির দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা পর্যন্ত। ছোলার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। তেলের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। তবে পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি রয়েছে।

অন্যদিকে সারাদিন রোজা রেখে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা শরবত পান করবেন। ওই শরবত বানানোর পণ্যের দাম এবার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি কেজি পানীয় শরবতের উপকরণ এবার বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দরে। সেই সাথে থেমে নেই লেবুর দামও। প্রতি ডজন ছোট লেবুও বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।

দেখায় যায়, দেশে রোজার সময় ছোলার চাহিদা থাকে প্রায় দেড় লাখ টন। খোলা বাজারে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ এবার কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে।

লাগাম ছাড়া দামের কারণে দেশি মুরগি ও গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য যাদের নেই, তাদের জন্য বড় ভরসা ফার্মের ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। কিন্তু সম্প্রতি মুরগির দামও বেড়েছে অনেক। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। সোনালি মুরগি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার রোজা বাজার করতে এসেছেন রামপুরা কাঁচাবাজার এলাকায়। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কীভাবে যে রোজার মাস পার করব তা বুঝতে পারছি না। আট হাজার টাকার বাজার করেছি, এখনও অর্ধেক বাকি। অথচ গত বছর এই টাকায় এক মাসের পুরো বাজার করেছি। ভালোভাবে চারজনের সংসার চলেছে।”

বনশ্রী কাঁচাবাজারে ছোলা ও চিনি কিনতে এসেছেন মেহেদী হাসান। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রোজা আসছে, তাই কিছু জিনিস কিনতে এসেছিলাম। দাম শুনে অবাক হচ্ছি। ছোলার কেজি ১০০ টাকা, চিনির কেজি ১২০ টাকা। এবার রোজার মাস কীভাবে পার করব সেই চিন্তা করছি।”

কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. আসলাম বলেন, “বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতেই সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে কয়েকদিন পর রোজা শুরু হবে। এর মধ্যেই বাজারে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বিক্রেতারা নিরবে বাড়াতে শুরু করেছে।” তিনি আরও বলেন, “গত বছর ৫০০ টাকা কেজিতে যে খেজুর কিনেছি, আজ তা ১২০০ টাকা চাচ্ছে। কোনো দাম না বলেই চলে এসেছি।”

ছোলার বাড়তি দাম নিয়ে মুদি ব্যবসায়ী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, “বর্তমানে ছোলার বাজার বাড়তি। এক সপ্তাহ আগেও যে ছোলা বিক্রি করেছি ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়, সেই ছোলা আজ কেনা পড়েছে ৯৪ টাকায়। এখন বিক্রি করছি ৯৮ থেকে ১০০ টাকায়।”

জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স গাউসিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, “ছোলার বাজার রোজার চাহিদার ওপর নির্ভর করে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তার আগেই আমদানিকারকদের কাছ থেকে ছোলা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। আমদানিকারক পর্যায় থেকে যে দর পাওয়া যায় তার সঙ্গে লভাংশ যুক্ত করেই দাম নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ছোলার দাম বৃদ্ধিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।”

রমজানে পণ্যর দাম ঊর্ধ্বগতি ও বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। রমজানকে টার্গেট করে বিশেষভাবে তদারকি করা হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

Link copied!