• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ঘোরাঘুরিতে ব্যয় বাড়বে


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৩, ০৬:২২ পিএম
ঘোরাঘুরিতে ব্যয় বাড়বে

ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি যে করারোপ করা হতো, ২০২৩-২৪ অর্থবছর বাজেটে তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০০৩ সালের ভ্রমণ কর আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে নতুন হার নির্ধারণ করেছেন তিনি। নতুন প্রস্তাবে ভ্রমণ কর দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় সংসদে এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী যে বাজেট বক্তব্য দেন, তার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’

আকাশপথে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, হংকং, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও তাইওয়ান যাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি ছয় হাজার টাকা কর দিতে হবে। বর্তমানে এই করের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ টাকা। আকাশপথে সার্কভুক্ত কোনো দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান কর ৮০০ টাকা।

উল্লিখিত দেশগুলোর বাইরে আকাশ পথে অন্য কোনো দেশে গেলে ৪ হাজার টাকা কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এখন ১ হাজার ৮০০ টাকা।

আকাশপথে দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগে কোনো ভ্রমণ কর ছিল না।

স্থলপথে যেকোনো দেশে গেলে কর দিতে হবে ১ হাজার টাকা, জলপথে অন্য দেশে গেলেও একই কর দিতে হবে।

অন্য দেশে স্থলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন ৫০০ টাকা এবং জলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ৮০০ টাকা কর দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ স্থলপথে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন কর দ্বিগুণ হল। তবে ১২ বছর পর্যন্ত যাত্রীদের ক্ষেত্রে উল্লিখিত হারের অর্ধেক হারে কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়।

যাদের দিতে হবে না ভ্রমণ কর

পাঁচ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী যাত্রীরা।

হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে গমনকারী ব্যক্তি।

অন্ধ ব্যক্তি বা ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী বা স্ট্রেচার ব্যবহারকারী পঙ্গু ব্যক্তিরা।
জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনীতিক মিশনের কূটনৈতিক মর্যাদাসম্পন্ন সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশে কর্মরত বিশ্বব্যাংক, জার্মান কারিগরি সংস্থা এবং জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

বিমানে কর্তব্যরত ক্রু সদস্যরা।

বাংলাদেশের ভিসাবিহীন ট্রানজিট যাত্রী যারা ৭২ ঘণ্টার বেশি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন না।

যেকোনো বিমান সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি বিনা ভাড়ায় অথবা হ্রাসকৃত ভাড়ায় বিদেশ যাবেন।

এর বাইরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি শ্রেণিকে এই ভ্রমণ কর থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে।

ভ্রমণ কর আদায়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সংস্থা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি কোষাগারে করের টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হলে যে মূল আদায়কৃত অর্থ এবং এর ওপর মাসিক শতকরা ২ শতাংশ হারে জরিমানা আদায় করা হবে।

এর আগে, বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি।

বাজেট প্রস্তাবনায় কোন কোন পণ্যের ওপর কী পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বা কোন কোন পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, তা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ যেখানে মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখাসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সুরক্ষায় বিলাসবহুল পণ্যে আমদানি নিরুৎসাহিত করছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “এ বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ছাড়া) ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২০ শতাংশের সমান। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ১০ শতাংশ।”

অনুদানসহ আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৪ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বিপরীতে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। তাতে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ধরা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক অনুদান ধরা হয় ৩ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ধরা হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। যার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে ও অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা ধরছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে কর বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ও কর ছাড়া ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে।

কর বাবদ যে রাজস্ব আসবে তার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা।

Link copied!