• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

যে কারণে এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
যে কারণে এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা
মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কম। ছবি: নিজস্ব

পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রতি ঈদে ঢাকা ছাড়েন প্রায় অধিকাংশ মানুষ। স্বল্প সময়ে এত সংখ্যক মানুষের যানবাহনের চাহিদা মেটাতে আন্তঃজেলা পরিবহনের পাশাপাশি ঢাকা নগরীর বাসগুলো একযোগে ছুটতে থাকে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফলে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। পথে পথে ভোগান্তির শিকার হন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের ঈদযাত্রায় ছিল ভিন্নতা। তীব্র যানজট কিংবা কোনো ভোগান্তি ছাড়াই স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছেন ঢাকার কর্মব্যস্ত মানুষ। একইভাবে তারা আবার ফিরে আসছেন কর্মস্থল রাজধানীতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর ঈদযাত্রায় বড় ধরনের কোনো ভোগান্তি লক্ষ্য করা যায়নি। এ জন্য পদ্মা সেতু চালু হওয়া, ঈদের ছুটি বৃদ্ধি, গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, স্কুল আগে ছুটি হওয়া, মহাসড়ক প্রশস্ত করা, সড়কের অবস্থা ভালো থাকা আর ব্যক্তিগত যান বা মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরাকে সুফল হিসেবে দেখছেন তারা।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের বাঁধভাঙা জনস্রোত দেখা গেছে এবারও। অনেকেই ঈদযাত্রা নিয়ে জনদুর্ভোগের আশঙ্কা করেছিলেন। তবে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় সব সংশয় ও শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে এবারের ঈদযাত্রা তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক হয়েছে।”

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবারের ঈদে ঢাকা ছাড়ার কথা ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। যাদের মধ্যে শুধু ঢাকা থেকে ১ কোটি, গাজীপুর থেকে ৪০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ লাখ এবং ঢাকার আশপাশ থেকে ৮ লাখ মানুষ ঈদে বাড়ি গেছে।

তথ্যমতে, এবারের ঈদযাত্রায় ৯ এপ্রিল অফিস করেই ছুটিতে চলে যান ঢাকার সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যানজটের কথা বিবেচনা করে পরিবার-পরিজন আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেন অনেকে। ঈদের ছুটির সঙ্গে পহেলা বৈশাখের ছুটি পাওয়ায় পাঁচ থেকে ছয়দিন ছুটি মেলে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো সংবাদপত্রেও ছয়দিনের ছুটি হয়। সব মিলে ঈদ উপলক্ষ্যে জন্মভূমির টানে এবার রেল, সড়ক, নৌপথ ও আকাশপথে যে যেভাবে পেরেছেন গ্রামে ছুটেছেন।

প্রতিবছর ঈদ এলেই সড়ক-মহাসড়কের কিছু কিছু স্থানে প্রবল যানজটের কবলে পড়েন নগরবাসী। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নীতকরণ কাজের ফলে যানবাহনের ধীরগতি বা যানজট বেশি দেখা যায়। যদিও এবার উত্তরার বিএনএস সেন্টার থেকে গাজীপুর পর্যন্ত উড়ালসড়ক চালুর কারণে মহাখালী থেকে আন্তঃজেলা পরিব্হনগুলোর বেশিরভাগই এটি ব্যবহার করায় নিচের সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ দেখা গেছে।

ঈদের ছুটি শেষে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসা সোহেল রানা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “উত্তরা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত উড়ালসড়ক চালু হওয়ায় বেশিরভাগ ময়মনসিংহগামী পরিবহন এ সড়ক ব্যবহার করেছে। শুধু তাই নয় উত্তরবঙ্গগামী অনেক যানবাহনও ব্যবহার করেছে। ফলে সিংহভাগ গাড়ির চাপ কমেছে। তাছাড়া নিচের সড়কের উন্নয়নের কাজ শেষ হওয়ায় খুব দ্রুতই গাজীপুর পার হওয়া গেছে। এসব কারণেই বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ছিলো।”

এদিকে, ঢাকার অন্যতম বৃহৎ বাস টার্মিনাল গাবতলীতে যানবাহনের চাপ দেখা যায়নি। যানবাহন মালিকরা বলছেন, পদ্মাসেতুর প্রভাবে গাবতলীতে যানবাহনের চাপ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে, প্রতিবার উত্তরবঙ্গের মানুষ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়লেও এবার পুলিশি তৎপরতায় খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়েননি যাত্রীরা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সেতুর আগে দুই কিলোমিটার সড়ক এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পর তিন কিলোমিটার সড়কে পুলিশের ভূমিকা ছিলো চোখে পড়ার মতো। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যানজটবিহীন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে শত শত পুলিশ কাজ করছেন। ফলে আশেপাশ থেকে ছোট যানবাহন মহাসড়কে উঠতে না পারায় অনেকটা ফাঁকাপথে ঘরে ফিরেছেন উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা।

রংপুর থেকে ঢাকায় আসা তহিদুল হক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এবার যানজট খুব কম ছিলো। পুলিশের তৎপরতায় এক লেন ধরেই পরিবহন শৃঙ্খলার সঙ্গে যাত্রা করেছে। ফলে খুব একটা বেশি যানজট লাগেনি। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং অত্রতত্র বাস লেন পরিবর্তন ঠেকাতে মাঠে ব্যাপক কাজ করেছে পুলিশ সদস্যরা। যার সুফল হিসেবে আমরা স্বস্তির ঈদযাত্রা উপহার পেয়েছি।

অন্যদিকে, স্বপ্নের পদ্মা চালু হওয়ায় যাত্রাবাড়ীর যানবাহনের বেশিরভাগ চাপ কমিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের সিংহভাগ পরিবহনই পদ্মা সেতু ব্যবহার করায় স্বস্তির ঈদযাত্রা হয়েছে এবার। তবে যাত্রাবাড়ী থেকে বেরোনোর পথে যানবাহনের বাড়তি চাপ লক্ষ করা গেলেও ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতায় যানজট দেখা যায়নি।

এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিলো কমলাপুর রেলস্টেশনে। অনলাইনে টিকিটের পাশাপাশি সরাসরি কাউন্টারে টিকিট কাটার সুবিধা রাখা হলেও যাত্রীদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সাতটি ট্রেন চালু করার কারণে চাপ কমে গেছে। শিডিউল বিপর্যয় নিয়ে যাত্রীদের মাঝে নানা শঙ্কা দেখা দিলেও বিপরীতে আরামদায়ক যাত্রা হয়েছে বলে একাধিক যাত্রী সংবাদ প্রকাশকে জানিয়েছেন।

বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের ঈদে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ, বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বিশেষ কিছু নির্দেশনা স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিত হয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার সঙ্গে বিভাগীয় শহরগুলোর যে মহাসড়ক রয়েছে, তার অধিকাংশ প্রশস্ত করা হয়েছে। অনেকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ লেনে বিভক্ত করা হয়েছে। কিছু জায়গায় উন্নয়ন কাজ চলমান থাকলেও সড়কের অবস্থা মোটামুটি ভালোই রয়েছে। ফলে আগের চেয়ে ঈদযাত্রায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও জট তৈরি হয়নি তেমন। পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলায় গাড়ি বেড়েছে কয়েকগুণ, পাশাপাশি ফেরির সেই ভোগান্তি আর নেই। তবে এবারের ঈদযাত্রায় স্বস্তির কারণ হিসেবে সড়কে নানামুখি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলছেন অনেকে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের সড়ক অবকাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গেল এক যুগে বহু মহাসড়ক দুই লেন থেকে চার লেন করেছি। মহাসড়কের দুই পাশেই সার্ভিস লেনসহ ডিভাইডার দেওয়া হয়েছে। ফলে ধীরগতির যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ ও জটলা তৈরি অনেকাংশে কমেছে”।

Link copied!