• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

এক সপ্তাহে বাড়ল ৯ পণ্যের দাম


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৪, ০৬:২৬ পিএম
এক সপ্তাহে বাড়ল ৯ পণ্যের দাম
এক সপ্তাহে বাড়ল ৯ পণ্যের দাম

নিত্যপণ্যের বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করা নিত্যদিনের নিয়মে পরিণত করেছেন যেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের। এদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রম চালাচ্ছে ভোক্তা অধিদপ্তর। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে ঘোষণা ছাড়াই ৯ পণ্যের দাম বেড়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মুগ ডালের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ, দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, দেশি হলুদের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, দারুচিনির দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ, লবঙ্গের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ০৫ শতাংশ, এলাচের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং তেজপাতার দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।

ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট শক্তিশালী হওয়ার কারণেই মূলত বাজারে স্বস্তি আসছে না বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ঘোষণা ছাড়া প্রায়-ই বাজারে কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে। যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। এতে সংসার চালাতে মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “বাজার মনিটরিং ছাড়াও এখন অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো দ্রুত শুরু করা উচিত। এখানে মন্ত্রণালয় ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব আছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বের একটা সংকট ছিল। এখন নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নিয়েছে। তারা কতটা পারেন তা দেখার বিষয়।“

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে চলমান ডলার সংকট, এলসি বন্ধসহ নানা অজুহাত দেখান ব্যবসায়ীরা। অথচ দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও সেই নির্দেশনাকে তোয়াক্কা করেন না তারা।

দেশে চাহিদা অনুযায়ী ডাল মজুত থাকার কথা বলা হলেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ছোলা টাকা ১১০, খেসারি ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৭০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা এবং বুটের ডাল ১১০ টাকা। ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও ছোলার কেজি ছিল ৯০ টাকা, খেসারি ৮০ টাকা, মুগডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা এবং বুটের ডাল ৯০ টাকা ছিল।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, আসন্ন রমজানকে ঘিরে প্রায় সব জিনিসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ডলার সংকট, এলসি বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে কোনো পণ্য না আসায় দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারওয়ান বাজারের এক মুদি ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রমজান ঘিরে অনেক আড়ত মালিক পণ্য মজুত করে রেখেছেন। যা এখনও বাজারে ছাড়ছেন না। যার ফলে আমরা চাহিদা মতো পণ্য পাচ্ছি না। যেখানে আমাদের দরকার ৫০ কেজি ডাল, সেখানে আমরা পাচ্ছি মাত্র ২০ কেজি। ৩০ কেজির যে ঘাটতি থাকছে সেটা কীভাবে পূরণ করবো।”

তিনি আরও বলেন, “রমজান এলেই বাজার ব্যবস্থাপনা খারাপ হয়ে যায়। দোষ করে বড় বড় ব্যবসায়ীরা, আর ভোক্তা এসে জরিমানা করে আমাদের। অথচ দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাতই থাকে না। বড় ব্যবসায়ীরা বাজার সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরকারের উচিত বড় বড় সিন্ডিকেট ভাঙা। যদি বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারে, তাহলে বাজারে পুরোপুরি শান্তি ফিরে আসবে না।”

সূত্র বলছে, রমজানকে ঘিরে সরকারের একাধিক সংস্থা তিন মাস আগেই বাজার তদারকিতে নেমেছে। তারা মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে। এছাড়াও রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে থাকবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে থাকবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দুই মাস আগেই রমজানকে ঘিরে সব ধরনের পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। বিপণন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।”

Link copied!