“বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। তাই যে যার মালসামানা নিজ হাতে করে নিয়ে যায়, আমাদের দিতে চায় না। আগের চেয়ে আয় কমেছে। দিনে ৫/৬শ টাকা আয় হয়। ঢাকায় একাই কষ্ট করে চলি। কিছু টাকা বাড়িতে পাঠাই। সবশেষ গরুর মাংস খেয়েছি কোরবানির ঈদে। স্ত্রী ছাড়াও তিন ছেলে মেয়ে। তাদের পড়ালেখা, সংসার খরচ আর নিজের খরচ মিলিয়ে অনেক কষ্টে চলতে হয়।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাগুলো বলছিলেন মিনতি শ্রমিক সাইদুল ইসলাম। (মিনতি শ্রমিক হলো বাজারে মালামাল মাথায় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন যারা।)
সাইদুল ইসলামসহ কয়েকজন মিনতি শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় সংবাদ প্রকাশের। এসব শ্রমিকদের কথায় উঠে আসে তাদের কষ্ট আর আক্ষেপ। দাম বৃদ্ধির প্রতিকারহীন বাজারে শুধু হাসফাসের দীর্ঘশ্বাসই যেন এসব শ্রমিকদের নিত্যসঙ্গী। তারা বলছেন, বাজারে আসা অধিকাংশ ক্রেতা তাদের খরচ কমিয়েছেন। ক্রেতারা, স্বল্প পরিমাণে ক্রয় করা পণ্যসামগ্রী নিজেই বহন করে নিয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব শ্রমিক কারওয়ান বাজার টুকরি মালিক সমবায় সমিতির মাধ্যমে কাজ করেন। এই সমিতিতে আছেন ২৬ জন মালিক। এই মালিকরা মিনতি শ্রমিকদের বহন কাজে ব্যবহৃত ঝুড়ি ভাড়া দেন। বড় আকারের ঝুড়ির জন্য একজন শ্রমিককে গুনতে হয় ৩০ টাকা আর ছোট আকাড়ের ঝুড়ির জন্য ২০ টাকা। সমিতির সংশ্লিষ্টদের কাছে শ্রমিক সংখ্যার সঠিক তথ্য নেই। তাদের মতে কারওয়ান বাজারে এই শ্রমিকের সংখ্যা সহস্রাধিক।
মিনতি শ্রমিক নূরজামান বলেন, “মানুষের বোঝা টেনেই আমাদের সংসার চলে। এখন মানুষ বোঝা টানতে দেয় না। আমরা চেয়ে নিয়ে বোঝা বহন করি। কীভাবে বহন করতে দেবে বলেন, সকলেই আসে, আর কম করে বাজার করে। তাতে আমাদের আয় রোজগার কমেছে।”
মিনতি শ্রমিক মজিবর বলেন, “আগে আয় করতাম ৬০০ টাকার বেশি। এখন কোনো রকমে ৫০০ টাকা হয়। ঝুড়ি আর রাতে ঘুমানোর খরচ বাবদ মালিককে দিতে হয় ৫০ টাকা। এক বেলা ভাত খেতে খরচ হয় ৬০ টাকা। অন্য খরচ তো আছেই। এই কাজ পরিশ্রমের। ভালো কিছু না খেলে শরীর ঠিক থাকে না। সেভাবে খেতে পারি না। কিছু করার নাই। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার পর মানুষও বাজারে আসতে চায় না। আমাদেরও আয় বাড়ে না। অল্প আয়ে নির্ভর হয়ে চলতে হচ্ছে।”
সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার কথা জানিয়ে কারওয়ান বাজার টুকরি মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির বলেন, “২৬ জন মালিক রয়েছে। তাদের অধীনে হাজারের ওপর শ্রমিক কাজ করছে। যারা কাজ করতে চায়, তারা এসে ঝুড়ি ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করে। সকলেই অনেক কষ্ট করেই চলে। সরকারি সুযোগ সুবিধা পায় না তারা।”