ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার স্বপ্নকে বিবর্ণ করে দেয় মহাসড়কের দীর্ঘ যানজট। ঈদকে সামনে রেখে কয়েক আগে থেকেই সড়কপথে বাসের টিকিট হয়ে পড়ে সোনার হরিণ। বহু কষ্ট আর যুদ্ধ করে সেই সোনার হরিণ ধরতে পারলেও বাড়ি ফেরার ভোগান্তি চরম আকার নেয়। ফলে অনেকেই বাড়ি ফেরার পরিকল্পনাই বাদ দিয়ে দেন। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ব্যতিক্রম। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বঙ্গবন্ধু সেতুর এপার-ওপার একদম ফাঁকা। কোনো যানজট নেই। মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ অংশসহ অন্যান্য স্থানে ফোরলেন খুলে দেওয়া হয়েছে। যাতে দূরপাল্লার গাড়িগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, দুই দিন আগে থেকেই মহাসড়কের দৃশ্য বদলাতে শুরু করেছে। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জুড়ে যানজটির চিরচেনা সেই দৃশ্য নেই। দূরপাল্লার গাড়িগুলো নির্বিঘ্নে যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষজন। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট নেই।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়ি, কাঁঠালতলা, কড্ডার মোড়, নলকা, পাঁচিলা, হাটিকুমরুল ও চান্দাইকোনা এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র।
মূলত, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের চারটি রুট দিয়ে ২২ জেলার গাড়ি চলাচল করে। প্রতি বছর ঈদের আগে পরে দুই/তিনগুণ বেশি যানবাহন চলাচল করায় দীর্ঘদিন ধরেই এসব মহাসড়ক উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের গলার কাঁটা ছিল। তবে সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় চারলেনে উন্নীতকরণে অগ্রগতির সঙ্গে পুলিশি তৎপরতায় দুর্ভোগমুক্ত ঈদযাত্রা দেখা গেছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, “জেলার সব মহাসড়কে ৭০০ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেই সঙ্গে পেট্রোল টিম, মোবাইল টিমসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ৬টি রেকার রাখা আছে।”
গাজীপুর প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, রাত পোহালেই ঈদ। তবে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথে চির চেনা সেই ভিড়, যানজট আর নেই। ঈদের আগের দিন বিকেলে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগরা বাইপাস, টঙ্গী এলাকায় মহাসড়ক একদম ফাঁকা দেখা গেছে। যদিও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে কিছু গাড়ি চলতে দেখা গেছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত সহকারী সুপার (ট্রাফিক) নাজমুস সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, “গত দুই দিনে বেশির ভাগ মানুষ শহর ছেড়ে চলে গেছে। বুধবার সকালে কিছুটা ভিড় ছিল। বিকেলের দিকে মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা। ধারণা করা হচ্ছে সন্ধ্যার পর যাত্রীর চাপ কিছুটা বাড়তে পারে।”
এদিকে, যাত্রী না থাকার কারণে কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকার মহাখালী থেকে কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সম্রাট পরিবহন। একই রুটে চলা জলসিঁড়ি পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আবুল হাসেম মিয়া গণমাধ্যমকে বলেছেন, “অন্য বছরের তুলনায় যাত্রী অনেক কম। ডেকেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।”
তমিজ উদ্দিন নামে এক পোশাকশ্রমিক বলেন, “এই প্রথম দেখলাম ঈদের আগে চান্দনা চৌরাস্তা সড়ক একেবারে ফাঁকা।”
আপনার মতামত লিখুন :