• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

কারওয়ান বাজার স্থানান্তর নিয়ে যা বললেন ক্রেতা-বিক্রেতারা


বিজন কুমার
প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৪, ০৯:৫৭ পিএম

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার। নগরবাসীর অনেকেই মনে করেন এই বাজারে, জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই হয়। আবার অনেকেই মনে করেন, এই বাজার ঢাকার হৃৎপিণ্ড। সবকিছু সুযোগ-সুবিধা থাকলেও ঈদুল ফিতরের পর এই বাজার স্থানান্তর করা হবে। যার প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সরানো হয়েছে ডিএনসিসি আঞ্চলিক কার্যালয়। তবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হলেও এর বিপক্ষে বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শ্রমিক ও ক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বাজার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যস্থানে নেওয়া হলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা হবে বেশি। আর ক্রেতার বলছেন, স্থানান্তর হলে ব্যয় বহুল হবে নিত্যপণ্যের খরচ।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাজার স্থানান্তর না করে আধুনিক বাজার নির্মাণ করা হলে এর সুযোগ-সুবিধা থেকে কেউই বঞ্চিত হবেন না।  

দীর্ঘ দিন ধরে মতিয়ার রহমান কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ-রসুনের খুচরা ব্যবসা করছেন। তিনি সম্প্রতি শুনেছেন কারওয়ান বাজার তুলে দেওয়া হবে। এরপর থেকে তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

মতিয়ার রহমান সংবাদ প্রকাশ বলেন, “বাজার অন্য জায়গায় নেওয়া হলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধায় পড়তে হবে বেশি। এখানে পরিচিত বেশি, বাকী মালামাল কিনে ব্যবসা করা যায়। টাকা ধার চাইলে পাওয়া যায়। অন্য কোথাও তো এই সুবিধা মিলবে না। কীভাবে চলব এই চিন্তায় পড়েছি। ভালো লাগছে না কিছু।”

জানা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে থেকেই এখানে বাজার ছিল। শতাব্দীর শেষের দিকে কারওয়ান সিং নামের মারওয়াড়ী এক ব্যবাসায়ী প্রথম এখানে মার্কেট নির্মাণ করেন। পরে তার নামানুসারে এই বাজারের নামকরণ হয় কারওয়ান বাজার।

বাজারটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বৃহৎ এই বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আলাদা সব আড়ত রয়েছে। যেমন-সবজির জন্য আলাদা, লোহার জিনিসপত্রের জন্য আলাদ প্রভৃতি। ফলে এই বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ক্রেতাকে বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় না।

রফিকুল ইসলাম নামের এক দর্জি বলেন, “আমার দোকানে প্রায় ৪ থেকে ৫ জন কাজ করে। ছোট বেলা থেকে এখানেই আছি। আমরা কেউ এখান থেকে যেতে চাই না। হঠাৎ করে কোথাও গেলে ভালো-মন্দ কিছুই করা যায় না।”

বাজারের মিনতি শ্রমিক সলিমুদ্দিন বলেন, “এই বাজারে ৩০ বছর ধরে কাজ করছি। এই বাজার উঠায় দিলে বিপদে পড়ব। যা হোক প্রতিদিন ৩ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। এই বাজার উঠায় দিলে সেই আয় বন্ধ হবে। পেটে লাথি পড়বে।”

নিত্যপণ্যের খরচ ব্যয়বহুল হবে জানিয়ে সবজি ক্রেতা শহিদুল বলেন, “এই বাজার সম্পূর্ণ উঠায় দিলে আমাদের বিপদ। এখানে কম দামে পাওয়া যায়। যদি গাবতলী দেয় তাহলে খরচ দিয়ে অতদূরে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমি থাকি কারওয়ান বাজারের কাছে।”

নগর পরিকল্পনাবীদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ড. মুহাম্মদ খান বলেন, “নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কারওয়ান বাজার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই বাজারের আশেপাশে বিল্ডিংগুলো অনেক পুরাতন হওয়া ফলে ভেঙে ফেলা জরুরি। কিন্তু বিল্ডিং ভেঙে বাজার সরানোর উচিত নয়। কারণ কারওয়ান বাজারের সুযোগ-সুবিধা সকলেই পান। বিল্ডিং ভেঙে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পূর্ণ একটি বাজার তৈরি করা হলে এর সুবিধা সকলেই পাবে। যেহেতু কারওয়ান বাজার অনেক বড় একটা এলাকাজুড়ে রয়েছে।”

Link copied!