• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

কেন্দ্রে ভোটার আনতে যত কৌশল আওয়ামী লীগের


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
কেন্দ্রে ভোটার আনতে যত কৌশল আওয়ামী লীগের
আওয়ামী লীগের লোগো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি। সেই হিসেবে নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৫ দিন। এই নির্বাচনকে যে কোনো মূল্যে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য দেখাতে চায় টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রে ভোটার আনতে নানা কৌশল নিয়ে ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রতীকের প্রার্থীরা। শুধু তাই নয়, সোমবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর কলাবাগান মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নির্বাচনী জনসভায়ও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপির নির্বাচনবিরোধী প্রচারণা রুখে দিতে নতুন বছরের প্রথমদিনের জনসভায় দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নতুন ভোটারদের নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তরুণ সমাজ ও তারুণ্যই হচ্ছে আমাদের অগ্রদূত। যারা প্রথম ভোটার হয়েছে, তাদের আহ্বান করব নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে।’

নির্বাচন নিয়ে ৫ চিন্তা আওয়ামী লীগের

দ্বাদশ নির্বাচনে পরাজয়ের শঙ্কা নেই আওয়ামী লীগে। নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত বিজয়ের মধ্যদিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অন্যরকম আতঙ্কে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী জনসভায় বলেছেন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। আন্তর্জাতিক মহলের কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।

দলটির নির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের পাঁচটি ভয় কাজ করছে। এই পাঁচটি ভয় কাটিয়ে উঠতে পারলেই নতুন সরকার শক্তিশালী হবে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। যে পাঁচটি ভয় নিয়ে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করছে তার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ভয়, কারচুপির ভয়, ভোটার উপস্থিতি, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতি।

দলীয় সূত্র জানা গেছে, গত ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। এ বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং কেন্দ্রে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। বিগত দিনে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনেও ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ ছিলেন। তাই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে একটা আশঙ্কা কাজ করছে দলটির মধ্যে। ফলে আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিপুলসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তা প্রমাণ করতেই মূলত এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণেই দলের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আসনভিত্তিক প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী তৈরি, ভোটারদের তথ্য-সংবলিত মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নেতাদের ভোটের মাঠে প্রচারে নামানো হয়েছে। প্রতিটি এলাকা থেকে কমপক্ষে ২০০ ভোটারকে কেন্দ্রে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য ৬ লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, নারী ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক ৪০ হাজার কমিটি করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের ৭০ ভাগ মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। কারণ তরুণ ভোটাররা ভোট উৎসবে শামিল হয়েছেন। তাই কোনো জবরদস্তি নয়। বরং ভোটাররা কেন কেন্দ্রে আসবেন, তা বোঝানো। এটা বোঝাতে পারলেই সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসবেন। এ জন্য নৌকার প্রার্থীদের ভোটারদের দরজায় যেতে হবে।

রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ

ভোটার আকৃষ্ট করতে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মশালায় মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এই কার্যক্রমের আওতায় ২০০ মাস্টার ট্রেইনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব মাস্টার ট্রেইনার সারা দেশে ৬ লাখ নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ৬ লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত এ কর্মী বাহিনী মাঠে কাজ করছেন, তারা ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। তাদের একেকজন আছেন ২০০ ভোটারের দায়িত্বে। এই প্রক্রিয়ায় তারা ১২ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। প্রশিক্ষিত ৬ লাখ কর্মী সব ভোটারের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণের এ উদ্যোগকে বলা হচ্ছে অফলাইন ক্যাম্পেইন। আর মাস্টার ট্রেইনাররা সরাসরি মাঠপর্যায়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য তার ভাবনা তুলে ধরছেন। পাশাপাশি বিরোধী দলের অপপ্রচারের পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরছেন, যা ভোটারদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। এই উদ্যোগ সমন্বয়ের জন্য একজন ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করা হয়েছে। কর্মীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় কল সেন্টার। এ ছাড়া এই পুরো কর্মযজ্ঞ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সমন্বয় করছে এক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দল।

আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পাশাপাশি আরও অন্তত তিনটি সেল নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের তরুণরা এসব নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ করছেন। এ জন্য দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলায় রয়েছে প্রশিক্ষিত ২০ হাজার কর্মী। তাদের সঙ্গে কেন্দ্র থেকে বিভিন্নভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতির হার বাড়াতে চায় আওয়ামী লীগ। ন্যূনতম ৫০-৬০ ভাগ ভোটার যাতে উপস্থিত নিশ্চিত হয়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমরা ভোটারদের বলছি, সকাল সকাল কেন্দ্রে আসবেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আশা করছি, এবারের নির্বাচনে ৬০ ভাগেরও বেশি ভোটার কেন্দ্রে এসে ভোট দেবেন।” 

Link copied!