জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে আজ। সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। এ লক্ষ্যে বেলা ১১টায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে রেজিস্ট্রার অফিস।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। রায় ঘিরে নিরাপত্তার স্বার্থে ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালের পাশে দোয়েল চত্বর হয়ে শিক্ষাভবনমুখী পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাসদরে চিঠি দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা ছাড়াও আলোচিত এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
জুলাইজুড়ে সারাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার সবগুলোর বিচার করা সম্ভব ছিল না আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। কারণ, সব হত্যায় অপরাধের বিচার করলে শেখ হাসিনার বিচার শেষ করতে লেগে যেত কয়েক বছর। এ কারণে সব হিসেব মিলিয়ে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেছে বেছে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আনে। এই পাঁচ অভিযোগেই সোমবার শেখ হাসিনার রায় দেখবে পুরো বিশ্ব।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি হলো গণভবনে বসে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা ও নাতিপুতি বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা ও সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে হামলা চালায়। এর মাধ্যমে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনায় আসামিদের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় এসেছে শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের ওপর।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ, তিনি আন্দোলনকারীদের দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি, ড্রোন দিয়ে আন্দোলনকারীদের খুঁজে বের করে এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। এর মাধ্যমে আসামিরা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে।
তৃতীয় অভিযোগে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডে তাদের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ছয়জন ছাত্র নিহত হন। এ ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আনা পঞ্চম ও শেষ অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ৬ জনের মধ্যে ৫ জনের লাশ পুড়িয়ে দেয়া এবং একইসঙ্গে গুরুতর আহত একজনকে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনায় ৩ আসামি কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ৫ অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে প্রসিকিউশন জানিয়েছে, যে ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন, যে যুক্তিতর্ক, ভিডিও-অডিও তারা দিয়েছেন, তাতে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজাই প্রাপ্য। তবে সবকিছু বিবেচনায় এখন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৩ বিচারকে হাতে। সেখানেই ঠিক হবে জুলাই হত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে তারা খালাস দেবেন, নাকি সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেবেন। তবে ৩ বিচারকের হাতে আমৃত্যু কারাদণ্ড বা নির্দিষ্ট মেয়াদে জেল দেয়ারও সুযোগও আছে।






























