রাজশাহীতে বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে তার ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক লিমন মিয়া (৩৫) গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনের পাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা ও সাবেক মেম্বার এইচ এম ছোলায়মান হোসেন শহীদের ছেলে তিনি। শহীদ মিয়া ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লিমন ‘জিয়া সাইবার সোর্স’-এর জেলা কমিটির সদস্য হিসেবেও যুক্ত ছিলেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শহীদ মিয়ার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে লিমন মেঝ। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রায় সাত-আট বছর চাকরির পর ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর থেকে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া হাট ও বালাসী ঘাট এলাকায় শেয়ার ও বালু ব্যবসাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যে যুক্ত ছিলেন।
পরিবারের দাবি, লিমন দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসার জন্য এক মাস আগেও ঢাকায় যান। কিন্তু ঢাকায় যাওয়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে তার আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। রাজশাহীতে যাওয়ার কারণ বা বিচারকের পরিবারের সঙ্গে লিমনের সম্পর্কের বিষয়ে পরিবারের কেউ কিছু জানেন না।
লিমনের বাবা শহীদ মিয়া বলেন, ‘কলেজে পড়ার সময় লিমনের সেনাবাহিনীতে চাকরি হয়। তবে চাকরি ছেড়ে আসার পর থেকেই তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দূরত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। সে এলাকায় ব্যবসা করতো, রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল না। এক মাস আগে চোখের চিকিৎসার কথা বলে ঢাকায় যায়। এরপর থেকে তার কোনও খোঁজ পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘বিচারকের ছেলে হত্যার ঘটনায় পুলিশ আমার ছেলেকে আটক করেছে বলে শুনেছি। যদি সে জড়িত থাকে, আইন অনুযায়ী তার বিচার হোক—এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
বিচারকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারের বাবার বাড়ি গাইবান্ধা শহরের এটেস্ট্রেটপাড়ায়। একই জেলার সন্তান হওয়ায় তাসমিন নাহার ও লিমনের মধ্যে পরিচয় ও যোগাযোগ গড়ে ওঠে। লিমন প্রায়ই আর্থিক সাহায্য চাইতেন। কিন্তু তাসমিন নাহার সহযোগিতা না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি একাধিকবার হুমকি দেন। সর্বশেষ ৩ নভেম্বর সকালে লিমন তাসমিন নাহারের মেয়ের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে পরিবারসহ হত্যার হুমকি দেন।
তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিমন ভিডিও বক্তব্যে দাবি করেন, ‘বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে তার পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিল এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে সদস্য হওয়ার সূত্রে তাদের পরিচয়।’
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর ডাবতলা এলাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ভাড়া বাসায় প্রবেশ করেন লিমন মিয়া। এ সময় তিনি বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা এবং বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারকে (৪৪) গুরুতর আহত করেন। পুলিশ দুজনকেই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, হামলাকারীর পকেটে পাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা আর্থিক লেনদেনের কারণ থাকতে পারে। ঘটনাটির প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
এর আগে, গত ৬ নভেম্বর সিলেটের জালালাবাদ থানায় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য লিমন মিয়া বারবার আর্থিক সাহায্য না পেয়ে তাকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। পুলিশ তখন তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।






























