আজ সংগীত সাম্রাজ্যের রানী রুনা লায়লার জন্মদিন। ৭২ বছরে পা রাখলেন তিনি—আর ঠিক সেই সঙ্গে সম্পন্ন করলেন ছয় দশকের সংগীতযাত্রা। ষাট বছর ধরে উপমহাদেশের তিন দেশে সমানতালে রাজত্ব করা এমন শিল্পীর নজির খুব কমই আছে।
যে কণ্ঠে ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’–র মতো লোকগান যেমন দ্যুতি ছড়ায়, তেমনি সাদাকালো যুগের ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ কিংবা পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের চিরকালীন ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত’ও হয়ে ওঠে জনপ্রিয়তার ঝড়—সে কণ্ঠ রুনা লায়লারই।
ছয় দশকের পথচলা, ১৮ ভাষা, ১০ হাজারের বেশি গান
রুনা লায়লা আজ শুধু বাংলাদেশের গর্ব নন; তিনি পুরো উপমহাদেশের সঙ্গীত-ঐতিহ্যের অংশ।
১৮টি ভাষায় গাওয়া ১০,০০০+ গান, অসংখ্য দেশীয়–আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক—সব মিলিয়ে তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
বাংলাদেশি সংগীতকে বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া শিল্পীদের তালিকায় তার নাম যে শীর্ষেই থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।
সিলেট থেকে পাকিস্তান হয়ে বিশ্বমঞ্চ
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্ম নেওয়া রুনা লায়লার সংগীতজীবন শুরু হয় ষাটের দশকের শেষভাগে, পাকিস্তানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। আহমেদ রুশদির গায়কীতে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি মাইক্রোফোন ধরেন এবং খুব দ্রুত উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করেন।
‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা পয়গাম’–এর মতো গান তার জনপ্রিয়তাকে তুঙ্গে পৌঁছে দেয়।
এরপর হিন্দি গানের জগতেও তার কণ্ঠ সমানভাবে আলোড়ন তোলে। সাদাকালো পর্দার হিট গান ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে ভারতের শ্রোতাদের কাছেও সুপরিচিত করে।
পরবর্তীতে বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে তৈরি ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম এক নতুন ইতিহাস গড়ে—যা বিশ্বজুড়ে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়।
বাংলাদেশি গানে অতুলনীয় অবদান
যদিও তিন দেশে কাজ করেছেন, রুনা লায়লার শিল্পীজীবনের কেন্দ্র সবসময়ই ছিল বাংলাদেশ। তিনি মোট ৭ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। ‘দ্য রেইন’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’—এমন বহু চলচ্চিত্রে তার কণ্ঠের আবেদন আজও অক্ষুণ্ন।
‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’ কিংবা ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এসব গান তার পরিবেশনায় যেন নতুন জীবন পেয়েছে।
মায়ের অনুপ্রেরণা—তার সাফল্যের ভিত
রুনা লায়লা প্রায়ই বলেন, তার সাফল্যের সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিলেন তার মা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন— “ছোটবেলায় যেখানেই গান গাইতে যেতাম, মা-ই আমাকে নিয়ে যেতেন।”
এই নিঃশর্ত সমর্থনের কারণেই আজকের রুনা লায়লার জন্ম।
তার ৭২তম জন্মদিন ঘিরে ভক্তদের জন্য বাড়তি চমক এসেছে কোক স্টুডিও বাংলার তরফ থেকে। তৃতীয় মৌসুমের পর্দা নামছে তার কণ্ঠেই— সমুদ্রপারের শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া তার বিখ্যাত সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’–এর নতুন সংস্করণ ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে রোববার রাতে। গানটি তার ক্যারিয়ারেরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এতো সাফল্য আর আলোচনার মাঝেও নিজের জন্মদিন নিয়ে খুব জাঁকজমক চান না রুনা লায়লা।তিনি জানিয়েছেন— “এবার কোনো বিশেষ আয়োজন রাখিনি। পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাব।”









-20251116170513.jpg)


























