• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
৭৪ বছরে আ.লীগ

বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি আছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩, ০৯:৫১ পিএম
বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি আছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুক্রবার (২৩ জুন)। সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ঐতিহ্যবাহী এই দলে পাহাড়সম অর্জন রয়েছে। টানা তৃতীয়বারসহ শেখ  হাসিনার নেতৃত্বে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে অমসৃণ দীর্ঘ এই চলার পথে দলটির সামনে এসেছে নানা বাধা-বিপত্তি, দুর্যোগ-দুর্বিপাক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা থেকে শুরু করে, সামরিক জান্তাদের রোষানল, নিষেধাজ্ঞা, হামলা-মামলাসহ কণ্টকাকীর্ণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসন, দমন পীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা দিয়ে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে পুনরায় বিজয় অর্জন করে এবং সেই থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে।

আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছে। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে এবং রায়ও কার্যকর করা হচ্ছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৪ বছরে দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন করে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নের সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে।

টানা ১৪ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে টানা সাড়ে ১৪ বছর ধরে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার মধ্য দিয়ে সুনামের সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীও তিনি। তার যোগ্য নেতৃত্ব দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছে। অর্জনের এই ধারাবাহিকতায় আবারও চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে ইতিহাস রচনা করতে চান শেখ হাসিনা।

৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার সূর্যোদয়ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, বেলুন ও পায়রা উড়ানোর মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন। সকাল সাড়ে ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। ফলে দলটির তৃণমূল আওয়ামী লীগে নেই উৎসবের আমেজ। দলের হাইকমান্ড থেকেও তৃণমূলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানান, এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা সভা এবং জেলা-উপজেলা কার্যালয়কে সাজানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তারপরও আমরা নিজেদের মতো করে দলে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনসহ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় উপযোগী কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার জন্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বাদশ নির্বাচন একেবারেই দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগকে নানা চ্যালেঞ্জ ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।

তাদের মতে, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ক্ষমতায় থাকা দলটির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত দেশ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়েও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া করোনার ধাক্কা না কাটতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বন্যা। এগুলো মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে আওয়ামী লীগকেই। পাশাপাশি দলকে তৃণমূল পর্যন্ত আরও সুসংগঠিত করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে তাদের। সবার আস্থা অর্জন করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দায়ও আওয়ামী লীগেরই বেশি। তবে নেতারা বলছেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তারা এগিয়ে যাবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাক। কিন্তু ইতিহাস থেকে দেখা গেছে এই দলের বাইরে তো তাদের শত্রু আছেই, এমনকি ভেতরেও অনেক শত্রু ঘাপটি মেরে আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তার প্রমাণ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করেছে খন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর; তারাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।”

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আজ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তাদেরও সেই ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। চলার পথে এই অগ্রযাত্রায় কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র যেন আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আওয়ামী লীগ বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। আর রাজনৈতিক দলকে সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই চলতে হয়। আওয়ামী লীগ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীরা একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর-পরবর্তী পর্যায় থেকে আজকের অবস্থানে তার নিজস্ব মহিমার প্রমাণ রেখেই টিকে আছে। আগামী দিনেও এই ধারাবাহিকতা থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, শান্তি ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ব।”

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে আটক ছিলেন। তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ করা হলেও পরবর্তী সময়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। আর ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দ দুইটি বাদ পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এ দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যতম প্রাচীন এ সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।

Link copied!