• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

খাদ্যের অবৈধ মজুতে যাবজ্জীবন, সংসদে বিল পাস


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৩, ০৮:৩৬ এএম
খাদ্যের অবৈধ মজুতে যাবজ্জীবন, সংসদে বিল পাস

নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে খাদ্যদ্রব্য বেশি মজুত করলে যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রেখে একটি নতুন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

বুধবার (৫ জুলাই) জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

এর আগে, বিলের ওপর বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

এই আইনের অধীনে কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে এটি হবে একটি অপরাধ এবং এর জন্য ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রস্তাবিত আইনে উৎপাদন বা বিপণনসংক্রান্ত অপরাধের জন্য ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড, সরবরাহ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড, বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রয় সংক্রান্ত অপরাধের জন্য ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

কোনো শ্রমিক, কর্মচারী, ঠিকাদার, মিল মালিক, ডিলার বা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন বা এ-সংক্রান্ত কোনো কর্মসম্পাদনে কর্তব্য পালনে বিরত থাকা বা কর্তব্য পালনে বাধা প্রদান করলে তাকে ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদান করা হবে।

ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট, ১৯৫৬ এবং ফুড গ্রেইন সাপ্লাই (প্রিভেন্ট অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিটি) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৯ রহিতক্রমে যুগোপযোগী করে প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, “এই বিলের মাধ্যমে চালের পোলিশিং বন্ধ করতে পারলে চার লাখ মেট্রিক টন চালের অপচয় রোধ করা যাবে। বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হলেও মূলত এই জাতের কোনো ধান বা চালের অস্তিত্ব নেই।”

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, “কাঁচা মরিচের কেজি ১০০০ টাকা হওয়ার পরে ভারত থেকে তড়িঘড়ি করে আমদানি করা হয়েছে। তাহলে আমরা কীভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম। যদিও বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন মন্ত্রী। কারণ তিনি নিজেই একজন বড় মাপের গুদাম ব্যবসায়ী।”

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিলের সাজা সংক্রান্ত ধারার সমালোচনা করে বলেন, “অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুত করেছিলেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ডে এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ধরনের আইন কোথাও শোনা যায়নি। অপরাধ না করলেও তাকে সাজা ভোগ করতে হবে।”

এসব সমালোচনার জবাবে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, “বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব। কৃষকদের নানা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে এই সরকার। প্রকৃত মজুতদারদের চিহ্নিত করা সহজ বিষয়। কৃষকদের ওপরে এই আইন প্রয়োগের কোনো আশঙ্কা নেই। এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালায় এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার করা হবে।”

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “বিশেষ ক্ষমতা আইন এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তাতে মজুতদারদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি দেওয়ার সুযোগ থাকলেও সরকার সে পথে হাঁটেনি।” 

Link copied!