• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ব্যবস্থাপনা সংকটে রপ্তানি কমেছে কৃষিপণ্যের


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৩, ০৮:০২ পিএম
ব্যবস্থাপনা সংকটে রপ্তানি কমেছে কৃষিপণ্যের

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের চা, তামাক ও মসলা জাতীয় পণ্যের রপ্তানি বাড়লেও কমেছে কৃষিজাত অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি। 

২০২১-২২ অর্থ বছরের তুলনায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রায় ৩২ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য কম রপ্তানি  হয়েছে। টাকার হিসেবে যা প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

সবচেয়ে বেশি কম রপ্তানি হয়েছে ফল। শাক-সবজির রপ্তানিও কমেছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ না করার কারণেই কমে থাকতে পারে কৃষিপণ্যের রপ্তানি।

উদ্যোক্তারা বলছেন, কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশে এখনও অনুকুল পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। 

অধিক বিমান ভাড়া, পণ্য পরিবহনে সঠিক ব্যবস্থা না থাকা, কার্গো বিমান না থাকা, অনুন্নত সেন্ট্রাল পার্কিং হাউজ, কোলিং ব্যবস্থা না থাকাসহ আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠার কারণেই কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে না।

ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মো. মনজরুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্য দেশে এখনও অনুকুল পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। 

এ ছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য কোনো ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি।

তিনি আরও বলেন, এই খাতকে কেউ ধারণ করে না। দেশে লজিস্টিক সাপোর্ট নেই, রিজিয়নাল কালেকশন সেন্টার নেই। এয়ারপোর্টগুলোতে ফুলচেইন সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। 

গার্মেন্টস পণ্যের মতো এয়ারপোর্টে দুই-চার ঘণ্টা পড়ে থাকে কৃষিপণ্য। এসব পণ্য ইউরোপ, আমেরিকা বা লন্ডনে যেতে যেতে পঁচে যায়। 

কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভিন্ন। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। দেশের রপ্তানিকারকদের সেই ব্যবস্থা নেই।

এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বহিঃর্বিশ্বে খাদ্যপণ্যসহ কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আসাদুজ্জামান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হাইজেনিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলা হয়। 

কিন্তু আমাদের দেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রায়ই আমরা হাইজেনিক স্ট্যান্ডার্ড মানি না। যেসব দেশে আমাদের কৃষিপণ্য যায় সেসব দেশে বাঙালিরাই ক্রেতা। 

শুধু চা ও তামাকের ক্রেতা সবাই। যে কারণে চা এবং তামাকের ক্রেতা কমেনি। শাক-সবজি ও ফলের রপ্তানি কমেছে।

কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক বাদল চন্দ্র বলেন, আমাদের বিষয় হলো কৃষিপণ্য উৎপাদন করা, আমদানি রপ্তানির বিষয়টি আমাদের নয়।

জানা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে সামগ্রীক রপ্তানির লক্ষ্য পূরণ না হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এ বছর বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে ৫ হাজার  ৫৫৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। 

সামগ্রিক রপ্তানির এই ধারাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কৃষিপণ্যের রপ্তানির চিত্র হতাশাজনক।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। 

অথচ বছরটিতে রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ১৩৯ কোটি ৪১ লাখ ডলারের। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি কম হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এর আগের অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছিল ১১৬ কোটি ২৫ লাখ ডলার। সে হিসেবে বিদায়ী বছরে কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ৩১ কোটি ৯২ লাখ ডলার। 

অর্থাৎ ডলারের বর্তমান দর ১০৮ টাকা ধরলে রপ্তানি কমেছে প্রায় তিন হাজার ৫শ কোটি টাকার।

ইপিবির তথ্য মতে, বিদায়ী অর্থবছরে চা রপ্তানি হয়েছে ২৩ লাখ ৪ হাজার ডলার। লক্ষমাত্রার তুলনায় রপ্তানি কম হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ।

 

 

Link copied!