• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
১৫০ ‍উপজেলায় ভোট ৮ মে

কোন্দল নিরসন কৌশলে আওয়ামী লীগ


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম
কোন্দল নিরসন কৌশলে আওয়ামী লীগ

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৯ মে প্রথমধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে নানা হিসাব নিকাশ চলছে। সবার অংশগ্রহণের লক্ষে এবার দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে দলটি। এছাড়া তৃণমূলে কোন্দল ও মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধের মাধ্যমে নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে দলীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমপি-মন্ত্রীদের প্রতি আবারও কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

সভানেত্রীর নির্দেশনার বিষয়টি জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ৮ মে প্রথমধাপের উপজেলা নির্বাচন হবে। এতে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের আবারও বলেছেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপও থাকবে না। অবাধ-সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি এমপি, আমার প্রভাব দেখাব, সেটি হবে না। সে যত বড়ই এমপি-মন্ত্রী হোক না কেন। কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। কেউ প্রশাসনের মাধ্যমে প্রভাব খাটাতে পারবেন না।

দলের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজনের নেতার ভাষ্য, দলীয় নেতাদের জন্য উন্মুক্ত থাকার পরও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভোটও হয়েছে শান্তিপূর্ণ। তবে চার ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলায় আসন্ন ভোটে কয়েকটি কারণে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে সর্তকবার্তা দেওয়া হয়েছে।

যেসব কারণে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে তা দূর করা না গেলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণ নাও হতে পারে। এমনটাই বলছেন অনেক নেতা। তারা শঙ্কার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নিজের অনুসারী প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ। পাশাপাশি তৃণমূলে নানা গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার, ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন, আগের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া নেতাদের ফের প্রার্থী করা ইত্যাদি বিষয়। এছাড়া রয়েছে তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের শঙ্কাও।

উদ্বিগ্ন নেতাদের অনেকেই বলছেন, ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, সারাদেশে সংঘাত-সহিংসতার মাত্রা ততই বাড়ছে। ইতোমধ্যে হামলা-ভাঙচুরের পাশাপাশি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার আগের দিন ১৪ এপ্রিল ফরিদপুরের সালথায় এলাকায় দলের দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তার আগের দিন ১৩ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জে দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হন। এর আগে গত ২ এপ্রিল মেহেরপুরে দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৭ জন আহত হয়।

তবে নেতারা বলছেন, তৃণমূলের কোন্দল নিরসনে নানা কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে দলীয় শীর্ষ নেতার নির্দেশনা মেনে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, জাতীয় নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার সুফল যেমন রয়েছে, কিছু কুফলও আছে। এতে দলের শৃঙ্খলায় সমস্যা তৈরি করছে, দলীয় নির্দেশনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা দিচ্ছে, প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরের উপজেলা নির্বাচনে সেই সমস্যার চিত্র স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। যে কারণে সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করা হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে বার বার সতর্ক করছেন।

Link copied!