• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচনে নাশকতা রোধে ৪৫ হাজার কমিটি করেছে আ.লীগ


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম
নির্বাচনে নাশকতা রোধে ৪৫ হাজার কমিটি করেছে আ.লীগ
প্রতীকী ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। ৭ জানুয়ারি একযোগে ২৯৯ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসব আসনে জন্য ২৮টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৯৭০ জনের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপলক্ষে সারা দেশে ৪২ হাজার ৩৫০টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এই নির্বাচনকে ‘পাতানো’ উল্লেখ করে বিএনপিসহ কয়েকটি সমমনা দল ভোট বর্জনের পাশাপাশি নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়েছে। হরতাল-অবরোধ ছাড়া জনগণ যেন ভোট না দিতে যায় তার গণসংযোগও চালাচ্ছে এসব দল।

বিএনপিসহ কয়েকটি সমমনা দলের ভোট বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে নাশকতা করছে দুর্বৃত্তরা। পোড়ানো হয়েছে সরকারি-বেসরকারি গণপরিবহন। উপড়ে ফেলা হয়েছে রেললাইন। যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা মারা হয়েছে। আগুন দেওয়া দিয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকে। এসব নাশকতা থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সাধারণ মানুষকে ভোট থেকে বিরত রাখতে এ ধরনের নাশকতা করা হচ্ছে ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোট কেন্দ্রগুলোতে নাশকতা হতে পারে। তাদের মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালে ততই মরিয়া হয়ে উঠবে। তাদের নাশকতার মাত্রা আরও বাড়তে পারে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে। যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না আসে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটেছে। ভোট প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটে।

নাশকতা রোধে ৪৫ হাজার কমিটি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপতৎপরতা ও নাশকতা প্রতিরোধ ও ভোট কেন্দ্র সুরক্ষায় তৃণমূলের ৪৫ হাজার কমিটি মাঠে কাজ করবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটের আগে-পরের অভিজ্ঞতা থেকেই এ প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই কমিটি সর্বজনীন করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও প্রগতিশীলদেরও রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, জোটভুক্ত ১৪ দলের নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, সমমনা জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, এলাকার মাতব্বর, পল্লি চিকিৎসক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। কমিটিতে থাকা এসব ব্যক্তি নিয়ে কাজ ও সচেতনতামূলক সভা করছে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগমুহূর্ত থেকে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও নাশকতা প্রতিরোধে এ কমিটির সদস্যরা পাড়া-মহল্লায় টহল দেবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, “আওয়ামী লীগের ৩০০ আসনের নির্বাচন পরিচালনা করে এই কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি। নির্বাচনী প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ, দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজটিও তারাই করেন।”

আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, “গত নির্বাচন থেকে কঠিন দায়িত্ব পড়েছে এসব কমিটির ওপর। বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনী নাশকতা প্রতিরোধের কাজ করছেন তারা। আগামী নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র পাহারা, যেকোনো নাশকতা প্রতিরোধ, ভোটারদের সুরক্ষার কাজও করবে এ ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি। কমিটির গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের নিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করছে আওয়ামী লীগ।”

এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধীরা চোরগুপ্তা নাশকতা করে ভোট বানচালের অপচেষ্টা করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে জ্বালাও-পোড়াও করেছে বিএনপি-জামায়াত। মানুষ হত্যা করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে। জনসাধারণের সাড়া পায়নি। এবারও বিএনপি-জামায়াতের ভোট বিরোধী কর্মসূচি হালে পানি পাবে না। জনগণ উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে। বিএনপি-জামাতে চোরাগোপ্তা নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রসহ সব জায়গায় তারা সতর্ক পাহারা দিবে। এছাড়া চোরাগোপ্তা হামলার বিরুদ্ধে প্রশাসনও তাদের মতো করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে জনসাধারণকে ভোটমুখী করতে আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলো মাঠে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গুছিয়ে এনেছে তারা। এই কমিটির নেতাকর্মীরা ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসব কমিটির মাধ্যমে ভোটারদের সচেতন করা, ভোট কেন্দ্রে যেতে সহযোগিতা করা এবং দলীয় পোলিং এজেন্ট মনিটরিংয়ের কাজটিও করবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতাও করবে। মূল দল আওয়ামী লীগসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ,  স্বেচ্ছাসেবক লীগ আলাদাভাবে দেশের ৪২ হাজার ৩৫০ ভোট কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে কমিটি গঠন করেছে। যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগও নিজেদের মতো করে গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে কমিটি গঠন করে কাজ করছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, “এবার স্থানীয় লোকজন নিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ১০০ জন করে নেতাকর্মী রাখা হয়েছে। তারা নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে অংশ নিবে। ভোটের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। পাশাপাশি বিএনপি জামাতের অপরাজনীতির বিষয়ে নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে।”

ভোটারদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করছে যুবলীগ
ভোটারদের ভোটদানে এবং কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে আওয়ামী যুবলীগ। এবারের নির্বাচনে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে আসা ও ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সে দায়িত্ব পালন করবে যুবলীগের কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি। সারা দেশের পাশাপাশি ঢাকায়ও ভোটের মাঠ চড়ে বেড়াচ্ছে যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ডের ৫২৫টি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করা হয়েছে। প্রত্যেক কমিটিতে ২০ জন সদস্য রয়েছে। প্রত্যেক সদস্যকে ভোটের দিন ২০ জন করে ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। এসব কমিটির নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেবে। এলাকায় কেউ যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে। কেউ যাতে ভোটারদের হুমকি ও তাদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে না পারে সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখবে। একই সুরে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক এ এইচ এম কামরুজ্জামান। তিনি জানান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ ৮টি নির্বাচনী আসনে ১২১৪টি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করেছে।”

৪৩ হাজার কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করেছে ছাত্রলীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এবং নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ করতে ৪৩ হাজার কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। প্রতি কেন্দ্রে ন্যূনতম ২০ জন সদস্য রয়েছে।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, “দ্বাদশ নির্বাচনে ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রে আমরা কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করেছি। প্রতি কেন্দ্রে ন্যূনতম ২০ জন সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের জেলা ও বিভাগীয় সমন্বয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এরা কেন্দ্র পাহারা দেবে, ভোটের পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করবে। নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেবে। কেউ সহিংসতার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করবে।”

Link copied!