জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও ধর্মঘটের নামে সারা দেশে গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধের দাবিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এছাড়া গণপরিবহনে যদি ভাড়া বাড়ে, তবে সেটি যেন সর্বোচ্চ ১৫ পয়সা হয়, সে দাবিও জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (৬ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, “করোনা সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত দফায় দফায় লকডাউনের কারণে দেশের ৭৭ ভাগ মানুষের আয় কমেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন, খাদ্যপণ্য ও কৃষিজ উৎপাদনসহ সামগ্রিক বায় আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। পণ্য ও সেবামূল্য আরও এক দফা বৃদ্ধি হলে চরমভাবে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। এতে নতুন করে আরও কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।”
বক্তারা আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায়ও সরকার উচ্চহারে তেল বিক্রি করে গত পাঁচ বছরে একচেটিয়া মুনাফা করেছে। এতে সরকার প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। মাত্র পাঁচ মাস ধরে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষের এই কঠিন দুঃসময়ে এক লাফে ২৩ শতাংশ তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি। আমাদের দেশে এমন সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হলো, যখন প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজেলের ওপর আবগারি শুল্ক লিটারপ্রতি ৫ ও ১০ টাকা কমিয়েছে। আর এ দাম গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে।”
বিশ্ববাজারের উদাহরণ দিয়ে বক্তারা বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০১৩ সালে তেলের দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অর্ধেকে নেমে এলে সরকার লিটারপ্রতি মাত্র তিন টাকা দাম কমিয়েছিল। পরে আরও দুই দফায় দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে তিন টাকা মূল্য কমানোর সুফল ব্যবসায়ীরা পেলেও যাত্রী সাধারণসহ সাধারণ লোকজন এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একই পন্থায় বর্তমানে এক লাফে ডিজেল, কেরোসিনের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে দৈনিক ২০ কোটি টাকা লোকসান কমানোর নামে দেশে সংকটাপন্ন সাধারণ জনগণের পকেট থেকে দৈনিক ৫০০ কোটি টাকা লোপাটের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হলো। অথচ আমাদের ছয় লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট থেকে জ্বালানি খাতে মূল্য না বাড়িয়েও বছরে ছয় হাজার কোটি টাকা বছরে ভর্তুকি দেওয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। সংকট কেটে গেলে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা যেত।”
অনতিবিলম্বে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে এহেন পরিবহন ধর্মঘটের নামে পরিবহনের নৈরাজ্য থেকে দেশের যাত্রী সাধারণসহ জনগণকে মুক্তি দিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান সমিতির নেতারা।