• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

১৯৭১-এর ডিসেম্বর । মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক


মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২২, ০৬:১২ পিএম
১৯৭১-এর ডিসেম্বর । মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক

ডিসেম্বর আমাদের স্মৃতিবিজড়িত বিজয়ের মাস। জাতিগতভাবে বাঙালিদের আনন্দের মাস। সেই সঙ্গে বেদনারও মাস। এ মাসেই আমরা হারিয়েছি দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। মার্চ মাস হতে চলমান যুদ্ধকালে এ মাসেই আমাদের দেশ আন্তর্জাকিভাবে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। মুখ্যত ভারত কর্তৃক এ মাসের ৪ তারিখে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষিত হলে অতিদ্রুত বদলে যেতে থাকে সার্বিক দৃশ্যপট। বেগবান হয়ে ওঠে হানাদারবিরোধী লড়াই। তাদের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। তদুপরি অনাগত ভবিষ্যতের শঙ্কায় উদ্বিগ্ন হতে হয় পুরো জাতিকে। পার করতে হয় উদ্বেগময় সন্ত্রস্ত প্রহর। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে উদ্ভূত হয়েছিল এ উদ্বেগ, এ উৎকণ্ঠা। বিজয়ের পথে চূড়ান্ত শিখরে উপনীত হয়েও তরি ডোবার উপক্রম হয়েছিল। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন বরাবরই ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। তাদের রক্ষার্থে সব ধরনের হুমকি, কূটকৌশল ও প্রলোভনমূলক অপচেষ্টার পরও যখন সফল হতে পারেননি, তখন তাদের অনুসৃত চিরায়ত তরিকায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করার প্রয়াস গ্রহণ করেছিল। সে লক্ষ্যে সপ্তম নৌবহর মোতায়েনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই সঙ্গে হিমালয় ভিঙিয়ে পূর্ব বাংলায় আগ্রাসন চালাবার জন্য প্রবলভাবে প্ররোচিত করা হয় গণচীনের নেতাদের। কিন্তু তারা সোভিয়েতদের রোষানলে পড়ার শঙ্কায় শত প্ররোচনার পরও নিক্সনের আহ্বানে সাড়া দেননি। এ অবস্থায় নিক্সন একাই এ যুদ্ধে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়ে বে অব বেঙ্গলে সপ্তম নৌবহর মোতায়েনের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক অ্যাডমিরাল মুর সপ্তম নৌবহর নিয়ে ভিয়েতনামের টংকিন বন্দর থেকে রওনা হয়ে ডিসেম্বরের ১০ তারিখে সিঙ্গাপুরে নোঙর করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে সোভিয়েতরা ষষ্ঠ নৌবহর নিয়ে বে অব বেঙ্গলে অবস্থান নেওয়ায় তিনি আর অগ্রসর হননি। সেদিন যদি সত্যি সত্যি মার্কিনরা সপ্তম নৌবহর নিয়ে বাংলার উপকূলে হাজির হতো, সোভিয়েতরা সহায়তার হাত প্রসারিত না করত, তাহলে অবস্থা কোন দিকে মোড় নিত, আমাদের কী পরিণতি হতো, তা আজও এক ওজনদার প্রশ্ন। এ প্রশ্নেই ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিনগুলো ছিল বাঙালিদের জন্য অত্যন্ত শঙ্কার ও উদ্বেগের। মার্কিনরা যদি ইন্দো চীনের মতো এ যুদ্ধে জড়িয়ে যেত; তাহলে আমাদের হয়তো বি-৫২ বোমারু বিমানের খোরাকে পরিণত হতে হতো। প্রলম্বিত হতো স্বাধীনতাসংগ্রাম। সর্বোপরি ধ্বংসের ভয়াবহতায় পুরো দেশ পরিণত হতো মহাশ্মশানে। শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু না ঘটায় বাঙালিদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হয়েছিল। দেশ পেয়েছিল স্বাধীনতা। আমাদের ভাগ্য ভালো; সে সময় আমরা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর মতো সহসী-প্রজ্ঞাময়ী ও নিকিতা ক্রুশচেভের মতো নির্ভীক নেতা পাশে পেয়েছিলাম। পেয়েছিলাম তাজউদ্দীন আহমদের মতো একজন বিচক্ষণ নেতাকে।

প্রকাশ থাকে যে নভেম্বরের শেষ দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাদের সমন্বিত আক্রমণ প্রবলভাবে জোরদার হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাকিস্তানি হানাদাররা প্রাণ রক্ষার্থে পালিয়ে যেতে থাকে। রাওয়ালপিন্ডির হাইকমান্ড এ সময় বুঝতে পারে যে এ যুদ্ধে জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। অতঃপর তারা নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার উপায় সন্ধানে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। তৎপ্রেক্ষিতে বিশ্বনেতাদের ধোঁকা, জনগণকে বিভ্রান্ত এবং মিত্রদের সহানুভূতি লাভের কুমতলবে চলমান মুক্তিযুদ্ধকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ফন্দি আঁটতে থাকে। সে লক্ষ্যে চলমান যুদ্ধকে ভারত ও পাকিস্তানের আন্তঃরাষ্ট্রীয় যুদ্ধের তকমা দিয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করতে থাকে। এ জন্য প্রণয়ন করা হয় ‘অপারেশন চেঙ্গিস খাঁ’ পরিকল্পনা। পরিকল্পনা মোতাবেক ৩ ডিসেম্বর অপরাহ্ণে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী ১১টি হাওয়াই আড্ডায় একযোগে চালানো হয় আকস্মিক আক্রমণ। এ ধরনের আচানক আক্রমণে হতবিহ্বল হলেও দ্রুততার সঙ্গে ভারত তাদের করণীয় নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার একটি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা হলে তিনি চটজলদি দিল্লির পথে যাত্রা করেন। আহ্বান করেন মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সে রাতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অতঃপর পরদিন থেকে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলে ব্যাপক পরিসরে বিমান হামলা চালানো হয়। এর দুদিন পর ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভারত ও নেপাল কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে যুদ্ধের গতি হয়ে ওঠে আরও বেগবান। ইতিমধ্যে তৎকালীন বৃহত্তর কুড়িগ্রাম মহকুমাসহ আরও বেশ কিছু অঞ্চল থেকে সবকিছু হারিয়ে বিতাড়িত হয় হানাদাররা। এলাকাসমূহ হয় শত্রুমুক্ত-স্বাধীন।

আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার সুবাদে ভারতের জন্য পূর্বাঞ্চলে আকাশ আক্রমণের পথ নির্বিঘ্ন হয়। ঝাঁক ঝাঁক বোমারু বিমানের অবিরাম আক্রমণের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়তে থাকে হানাদার সেনারা। তাদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যূহগুলো চোখের পলকে ধ্বংস হতে থাকে। প্রকাশ থাকে যে সে সময় ভারতীয় বিমানবাহিনীর বহরে ছিল রাশিয়ার নির্মিত অত্যাধুনিক মিগ-২১ বোমারু বিমান। অন্যদিকে ঢাকায় তাদের সম্বল ছিল পুরোনো প্রজন্মের ১৪টি এফ ৮৬-ই স্যাবর জেট। যে কারণে প্রাথমিক আক্রমণেই পাকিস্তানিদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের আর আকাশে যুদ্ধ করবার সুযোগ মেলেনি। ধারাবাহিক আক্রমণের একপর্যায়ে গভর্নর হাউসে শেলিং করা হয়। ফলে বেসামরিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার পুরোটাই অচল হয়ে পড়ে। গভর্নর ডা. মালেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। জীবন বাঁচাবার জন্য নিরপেক্ষ এলাকা হিসেবে ঘোষিত হোটেল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল’-এ আশ্রয় নেন। শুধু আকাশপথেই নয়, এ সময় মিত্রসেনারা উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে রাজধানীর দিকে ধেয়ে আসতে থাকে। তাদের সহায়তার জন্য ডিসেম্বরের ১১ তারিখে পাঁচ হাজার প্যারাট্রুপার কলকাতা থেকে উড়াল দিয়ে ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইল এলাকায় অবতরণের পর ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এভাবে নানারৈখিক আক্রমণ ও পরিকল্পিত ঘেরাওয়ের ঘেরাটপে অবরুদ্ধ করার মাধ্যমে স্থবির করে দেওয়া হয় হানাদার বাহিনীকে। পশ্চিমাঞ্চলেও নাকাল হয়ে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত হারাতে হয় পাঁচ হাজার বর্গমাইল এলাকা।

এ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে ধাবমান, হানাদাররা যখন হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে প্রাণ বাঁচাবার উপায় সন্ধানে ব্যাপৃত, তখনো আওয়াজবাজ সেনা কর্মকর্তা, স্থানীয় দালাল ও পশ্চিমের নেতারা দিল্লি জয়ের দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে অবান্তর কথা বলতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন বিশ্বাস করতে থাকে; পূর্বাঞ্চলের সবকিছু ঠিকঠাকমতো চলছে, বিবিসি বা আকাশবাণী হতে যেসব সংবাদ প্ররাচিত হচ্ছে, তার পুরোটাই মিথ্যাচার ও অপপ্রচার। এ সময় একদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো দিশেহারা হয়ে ভারতকে হুঙ্কার দিয়ে বলতে থাকেন ‘গঙ্গা-যমুনার জল রক্তে লাল হয়ে যাবে।’ অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নিশ্চিত জয়ের নেশায় হুইস্কিতে বিভোর হয়ে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরাজয়ের কিয়ৎকাল আগে পাকিস্তানের মিত্ররা যখন পূর্বাঞ্চলের সেনাদের রক্ষার্থে নানামুখী তৎপরতায় ব্যস্ত, তখনো পরাজয় পরিহারের প্রত্যাশায় অধিনায়কদের কেউ কেউ মরণপণ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন জামালপুর-ময়মনসিংহ এলাকার অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার কাদির। প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিয়ে কামালপুর-বকশীগঞ্জ-জামালপুর এবং হাতিবান্ধা-শেরপুর-জামালপুর অক্ষ বরাবর জোরদার প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়ে তোলেন ব্রিগেডিয়ার কাদির। ধারণা করা হয়, এসব এলাকার দায়িত্বে ছিল ৩১ বালুচ ও ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। এত প্রস্তুতি নিয়েও আখেরে তাদের পালিয়ে আসতে হয়। মিগ-২১-এর ধারাবাহিক আক্রমণের মুখে তারা আর কোনো অবস্থানই ধরে রাখতে পারেনি। একপর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ওড়াতে হয় সাদা পতাকা।

প্রকাশ থাকে যে বীর গেরিলাযোদ্ধাদের অবিরাম আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে শেষের দিকে হানাদার সেনারা মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। যে মর্দে মোমিনের জোশ নিয়ে তারা এ মাটিতে পদার্পণ করেছিল, তা কর্পূরের মতো উবে গিয়েছিল মাত্র আট মাসের মাথায়। কেন এই যুদ্ধ তা নিয়েও অধস্তনদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল প্রবল সংশয়-বিভ্রান্তি। ফলে ভেঙে পড়েছিল সেনাবাহিনীর সার্বিক কমান্ড। লেজেগোবরে অবস্থায় কেউ আর কারও কমান্ডে ছিল না। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আর জুনিয়রদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। এমনটাই দৃশ্যমান হয়েছিল পিন্ডি থেকে পরিস্থিতি দেখতে আসা জেনারেল হামিদের পর্যবেক্ষণে। এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার এ আর সিদ্দিকি তার পর্যবেক্ষণলব্ধ অভিজ্ঞতায় লিখেছেন, যেখানে গিয়েছি সেখানেই এক চিত্র। শুধু বিহারিদের খানিকটা প্রাণবন্ত দেখাচ্ছিল, যাদের অধিকাংশ ছিল শান্তি কমিটির সদস্য। নিয়াজি খালি পাবলিক রিলেশন বা পিআরের কথা তুলতেন, যা কিছু শুনতেন সবই ছিল তার কাছে ভারতীয় প্রপাগান্ডা। অথচ সে সময় ঢাকার জীবন একেবারে থেমে গিয়েছিল। নগরীর ভেতরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা মোকাবিলার জন্য কারফিউ দেওয়া হয়েছিল। শহরে প্রবেশের পথগুলোতে প্রতিবন্ধক নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু তারপরও গেরিলাদের প্রবেশ ছিল অব্যাহত। সরকারি কোনো কার্যক্রমও তখন ছিল না। এমনটাই বলেছেন সে সময়কার কুখ্যাত জেনারেল রাও ফরমান আলী।
তদুপরি সংকটের গহিনে নিপতিত হয়েও দেশটির মাতাল প্রেসিডেন্ট কাঙালের মতো তাকিয়ে থাকেন নিক্সনের দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টার পরও ইয়াহিয়াকে কিছুই দিতে পারেনি নিক্সন প্রশাসন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ সময় জে. ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফেরার পথে এডিসি তাকে হুইস্কির গ্লাস ধরিয়ে দিলে; ইয়াহিয়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তিনি বলেছিলেন; দোয়া ছাড়া আপনাদের জন্য আমার আর কিছুই করণীয় নেই। এই সংকটময় সময়ের একপর্যায়ে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে রাওয়ালপিন্ডি থেকে একটি তারবার্তা পেয়ে ভেঙে পড়া নিয়াজি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বার্তায় বলা ছিল; উত্তর দিক থেকে হলদেরা এবং দক্ষিণ দিক থেকে সাদারা আসছে। এর অর্থ ছিল তাদের সহায়তার জন্য সাগরের দিক থেকে আমেরিকানরা আর হিমালয় ডিঙিয়ে উত্তর দিক থেকে চীনের সৈন্যরা আসছে। এই বার্তায় উদ্দীপ্ত হয়ে জে. নিয়াজি হুঙ্কার দিয়ে বলতে থাকে; এমনকি ট্যাংকও যদি তার শরীরের ওপর দিয়ে যায়, তাহলেও তিনি সেই ট্যাংকগুলোকেও থামিয়ে দেবে। পিন্ডির ওই বার্তাটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছিল না। চীনারা এ ব্যাপারে নিস্পৃহ থাকলেও নিক্সন ছিলেন অনেকটা সরব। তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে তিনি সপ্তম নৌবহর প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা ইতিপূর্বে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

পরাজয়ের অন্তিম পর্যায়ে শেষ ভরসার স্থল  জাতিসংঘও দিশেহারা পাকিস্তানিদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ইজ্জত বাঁচাবার আশায় আত্মসমর্পণের পরিবর্তে যেকোনো উপায়ে পলায়ন বা যুদ্ধ বিরতির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কপালে সম্মানজনক কিছু জোটেনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের অনড় অবস্থানের কারণে পেয়ারের নিক্সনও পাকিস্তানের জন্য কার্যকর কিছুই করতে পারেননি। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক বলয়ের দেশসমূহ বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। যে কারণে পাকিস্তানিরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কোনো সুবিধা করতে পারেনি। যুদ্ধে নাকাল হয়ে নভেম্বরের ৩০ তারিখে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সীমানা পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও নিরাপত্তা পরিষদের কেউই তা আমলে নেওয়া আবশ্যক মনে করেনি। অতঃপর পাক-ভারত যুদ্ধ ঘোষিত হলে ডিসেম্বরের ৪ তারিখে বিষয়টি আবার আমেরিকা কর্তৃক উত্থাপিত হলেও ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। এরপর চীনারা ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করলে, আমেরিকা তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি দাবি করলে ও ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব উত্থাপন করলে; সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোতে সবকিছুই নাকচ হয়ে যায়। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে আমেরিকা কর্তৃক যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাব উত্থাপিত ও কতিপয় সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক তা সমর্থিত হলেও পুনর্বার সোভিয়েত হস্তক্ষেপে তা নাকচ হয়ে যায়। এ সময় চীনের ভূমিকা ছিল প্রবলভাবে ভারত ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। একপর্যায়ে ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্য চীনের পক্ষ থেকে অন্যান্য দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হলেও তাতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।

অতঃপর ডিসেম্বরের ৮ তারিখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আমেরিকা সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির আয়োজন করা হলে; ভারতের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়; আমরা যুদ্ধবিরতি করব না। অবশ্যই না। আমরা বোকা নই। বাংলাদেশ থেকে কোনো সৈন্যও প্রত্যাহার করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় তারা। ওই প্রস্তাবের পক্ষে ১০৪টি এবং বিপক্ষে ১১টি ভোট পড়লেও সোভিয়েত ভেটোতে সব আয়োজন বরবাদ হয়ে যায়। ডিসেম্বরের ১২ তারিখে আরেক মার্কিন প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি হলে ১৩ ডিসেম্বরে সোভিয়েতদের তৃতীয় ভেটোতে তা-ও নাকচ হয়ে যায়। এরপর ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে ফ্রান্স ও ইতালির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটিতে শুধু পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছিল। যে কারণে এ নিয়ে কোনো পক্ষের আগ্রহ না থাকায় তা নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। পরদিন ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে পোল্যান্ডের পক্ষ থেকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রস্তাবের খসড়া উত্থাপিত হয় নিরাপত্তা পরিষদে। প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিতও হয়। এতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি ও পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহারবিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার শর্তে প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভারত এ প্রস্তাব গ্রহণে সম্মতি দিয়েছিল। প্রস্তাবটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল; যুদ্ধবিরতি এবং পূর্বাঞ্চল থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার, যা পাকিস্তানিদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। এ প্রস্তাব মেনে নিলে তারা অপমানজনক আত্মসমর্পণ পরিহার করতে পারত। যে কারণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্রস্তাবটি মেনে নিতে বলেন ভুট্টোকে (পাকিস্তান পিপল্স পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো সে সময় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ দূত হিসেবে জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন)। কিন্তু ভুট্টো তাতে সম্মত হননি। এ বিষয়ে টেলিফোনে আলাপকালে ‘মুঝে কুছ ছুনাই নাহি দেতা হ্যায়’ বলে কৌশলে ইয়াহিয়াকে পাশ কাটিয়ে যান ভুট্টো। অতঃপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সম্মুখে প্রস্তাবের কাগজ ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলতে থাকেন, আমরা যুদ্ধ করব। আমার দেশ আমাকে ডাকছে। এখানে আর সময় নষ্ট করা যাবে না। আপনাদের নিরাপত্তা পরিষদ এখানে পড়ে থাক। আমি চললাম। কথাগুলো বলতে বলতে ভুট্টো পরিষদ ভবন থেকে বেরিয়ে যান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সম্মতি সত্ত্বেও সেদিন কেন ভুট্টো পোলান্ডের প্রস্তাব মেনে নেননি! সে সম্পর্কিত তাৎক্ষণিক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এর দীর্ঘদিন পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তখনকার কর্নেল রিয়াজ জাফরী ২০১৬ সালে এ-বিষয়ক এক নিবন্ধে লিখেছেন, পোল্যান্ডের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার প্রকৃত অর্থ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাকে (স্বাধীনতা) মেনে নেওয়া। তদুপরি তিনি স্বীকার করেন; প্রস্তাবটি মেনে নিলে ভারতের কাছে তাদের আত্মসমর্পণ করতে হতো না। উল্লেখ্য, পাকিস্তানিদের একটি বড় ভরসার দেশ ছিল চীন। কিন্তু বাহ্যিক সমর্থন ও অস্ত্র বিক্রি ছাড়া তারা কোনো কাজেই লাগেনি। তারা যেমন রণাঙ্গনে পাশে দাঁড়ায়নি, তেমনি নিরাপত্তা পরিষদেও পাকিস্তানের জন্য কার্যকর কিছু করতে পারেনি। পরিশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাই এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন যে তারা পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যখন পাকিস্তানিদের ভাগ্য নির্ধারণী আলোচনা চলছিল। জে. ইয়াহিয়া চারদিকে অন্ধকার দেখছিল তখন-১৩/১৪ ডিসেম্বর রাতে তিনি কমান্ডার-ইন-চিফ জে. হামিদকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। সে নিরিখে ১৪ ডিসেম্বরে প্রেরিত এক বার্তায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ ও সেনাসদস্যদের জীবন রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় জে. নিয়াজিকে। তৎপ্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করার জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল জেনারেল স্পিভাকের দ্বারস্থ হয়ে জে. নিয়াজি জানান; সৈনিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে তিনি যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে প্রস্তুত আছেন। যুদ্ধবিরতি বলা হলেও আদতে তা ছিল আত্মসমর্পণ। 
অতঃপর জেনারেল নিয়াজির লিখিত যুদ্ধবিরতি-বিষয়ক একটি পত্র ঢাকাস্থ মার্কিন উপদূতাবাসের মাধ্যমে ১৫ ডিসেম্বরে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশর কাছে হস্তান্তরিত হয়। প্রত্যুত্তরে জে. মানেকশ জানান; অগ্রসরমাণ ভারতীয় সৈন্যদের কাছে যদি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে, তবেই শুধু যুদ্ধবিরতি গ্রহণযোগ্য এবং সৈন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

অতঃপর একদিকে মানেকশকে এলান, ‘হাতিয়ার ডাল দোও’ বলে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হতে থাকে, অন্যদিকে নিয়াজিকে ভাববার সময় দেওয়ার জন্য ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বিমান হামলা বন্ধ রাখা হয়। এরই সঙ্গে জে. মানেকশ নিয়াজিকে হুমকি দিয়ে বলেন; যদি আপনি আমার কথা মেনে না নেন, সে ক্ষেত্রে আমার জন্য বিকল্প কিছু থাকবে না, ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে আমাকে পুরো শক্তিতে পুনরায় আক্রমণ শুরু করতে হবে। এরপর আত্মসমর্পণ ব্যতিরেকে জে. নিয়াজির জন্য আর কোন পথ খোলা ছিল না। উত্তর বা দক্ষিণ দিক থেকে কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১টায় ভারতীয় কর্নেল খারা জে. নিয়াজিকে আত্মসমর্পণের শর্তাবলি পাঠ করে শোনান। এ সময় পিনপতন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল নিয়াজির কক্ষে। তার দুচোখ থেকে অঝোর ধারায় ঝরছিল পরাজয়ের জল।

সেখানে উপস্থিত অন্য জেনারেলরা এ ধরনের আত্মসমর্পণের প্রস্তাবে সম্মত হতে চাইছিল না। এর মধ্যে জে. রাও ফরমান আলী ভারতীয় বা বাংলাদেশি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের প্রত্যাশা ছিল; তারা ১৪ ডিসেম্বরে মার্কিন উপদূতাবাসের স্পিভ্যাককে দেওয়া খসড়া মোতাবেক যুদ্ধবিরতির দলিলে স্বাক্ষর করবে। কিন্তু এ পর্যায়ে তাদের জন্য কোনো বিকল্পই অবশিষ্ট ছিল না। যে কারণে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় তারা। এ পর্যায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল নাগরা কক্ষে প্রবেশ করামাত্র নিয়াজি তাকে (জে. নাগরা ছিলেন নিয়াজির পুরোনো দিনের বন্ধু) দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অতঃপর কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলেন; ‘পিন্ডিমে বাইঠে হুয়ে হারামজাদো নে মারওয়া দিয়া।’

জে. নিয়াজি ছিলেন একজন ইতর প্রকৃতির জেনারেল। তার মধ্যে শালীনতা বোধের কোনো বালাই ছিল না। ঢাকায় কমান্ড নেওয়ার সময় বাঙালি জাতির নকশা বদলে দেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছিলেন। নিজে যেমন একজন নিষ্ঠুর ধর্ষক, তেমনি তার বাহিনীকেও ধর্ষণের জন্য উৎসাহিত করতেন। এ কুকর্মের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলতেন; সৈনিকরা যুদ্ধ করবে এখানে আর সংগম করতে ঝিলাম যাবে, তা কী করে হয়। আত্মসমর্পণের সেই অন্তিম সময়েও নিয়াজির যখন অনুতপ্ত, মর্মাহত বা শোকাহত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল, তখন লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়ে জে. নাগরার সঙ্গে অমার্জিত-অশালীন কৌতুকের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিলেন। সে সময়ও নিজেকে ইতরামি থেকে বিরত রাখতে পারেননি। এই অথর্ব অমানুষটির হাতেই অর্পিত ছিল ইসলাম ধর্ম রক্ষার দায়িত্ব। যে কিনা ঠেকাতে পারেনি তার বাহিনীর ৬৭৮১ জনের মৃত্যু। পারেননি অপমানজনক অত্মসমর্পণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে।

অতঃপর এই অত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির জাতির স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। প্রকাশ থাকে যে বিগত শতাব্দীর ৫০-এর দশক থেকে জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন লালন করছিলেন; এই অত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা পেয়েছিল। এ জন্য উৎসর্গ করতে হয়েছিল ত্রিশ লাখ জীবন, ২ লাখ বীরাঙ্গনাকে খোয়াতে হয়েছিল নারীত্বের সর্বস্ব এবং লক্ষাধিক বীর যোদ্ধাকে হাতে তুলতে হয়েছিল হাতিয়ার।

সহায়ক তথ্য-উৎস

১। খান, রাও ফরমান আলী। ২০১৪। বাংলাদেশের জন্ম। ঢাকা। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড 
২। জেকব, লে. জেনারেল জে এফ আর। ২০১৪। সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা (অনুবাদ: আনিসুর রহমান মাহমুদ)। ঢাকা। দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
৩। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র। ২০০৩। খণ্ড-১৪। সম্পাদক: হাসান হাফিজুর রহমান। ঢাকা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয় 
৪। মামুন, মুনতাসীর। ২০১১। পাকিস্তানি জেনারেলদের মন। ঢাকা। সময় প্রকাশন
৫। মুহিত, আবুল মাল আবদুল। ২০১২। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব। ঢাকা। সাহিত্য প্রকাশ
৬। সিং, সুখওয়ান্ত। ২০০০। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় (অনুবাদ: সায়দুল হক)। ঢাকা। মীরা প্রকাশনী 
৭। হোসেন, আকবর। ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০। মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ ১০ দিন শক্তিধর দেশগুলো যেভাবে ঠান্ডা লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল। ঢাকা। বিবিসি বাংলা 
৮. Gary, J Bass. 2013. The Blood Telegram, India’s Secret war in East Pakistan. Noida (UP). 134. Random House India.
৯. Sengupta. Nitish. 2011. Land of Two Rivers. India. Penguinbooks.

Link copied!