আসছে ঈদুল আজহা। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। অনলাইনে এবং রাজধানীর বিভিন্ন হাট ঘুরে কোরবানির পশুর কেনাবেচা চলছে। বাড়িতেও নেওয়া হচ্ছে সব প্রস্তুতি। পশু কোরবানি দেওয়া, মাংস কাটা, পরিষ্কার করা, ভাগ করে গরিব-দুঃখী ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বণ্টন করার জন্য় যাবতীয় প্রস্তুতি কিন্তু আগ থেকেই নিতে হয়। ঈদের দিন অনেক ব্যস্ততা থাকে। কাজগুলো গুছিয়ে রাখলে ওই দিন সহজেই সবকিছুর সমন্বয় হবে।
কোরবানির ঈদের দিনটিতে কাজগুলো সহজ করে নিতে কিছু বিষয়ে আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। ঈদের পূর্বপ্রস্তুতি কেমন হবে, তা জানাব এই আয়োজনে।
মাংস কাটার সরঞ্জাম শাণ দিয়ে রাখুন
কোরবানির মাংস কাটার জন্য প্রয়োজন হয় ধারালো ছুরি, বঁটিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। এগুলো বছরে একবারই প্রয়োজন হয়। বাকি সময়টা হয়তো কাপড়ে মুড়িয়ে সরঞ্জামগুলো যত্নে তুলে রাখেন। ঈদের আগেই এগুলো বের করে ধার করে নিন। বাসার বঁটি, ছুরি, চাপাটি নতুন করে ধার করানো থাকলে ঈদের দিন মাংস কেটে নিতে সময় লাগে না। সহজে ও দ্রুত কোরবানির কাজ শেষ করা যাবে।
মাংস বণ্টন
কোরবানির মাংস গরিবদের মাঝে এবং আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এই কাজটি করতে আগেই কিছু প্রস্তুতি রাখুন। কিছু ব্যাগ কিনে রাখতে পারেন। যার মাধ্যমে মাংসগুলো প্যাকেটিং করে আত্মীয়দের বাসায় পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে। গরিবদের জন্য় ভাগ করা মাংসগুলো বণ্টনের জন্য় একটি পাত্র রাখতে পারেন। তা দিয়ে মেপে সবার মাঝে সমান করে ভাগ করে দিতে সহজ হয়। পাত্রটি হাতের কাছেই রাখুন।
মাংস রান্নার সরঞ্জাম
কোরবানির পশু জবেহ করার পরই মাংস রান্না করা হয়। অনেকেই বেশি পরিমাণে মাংস একসঙ্গে রান্না করেন। সেই অনুযায়ী পাত্র প্রস্তুত করে রাখুন। বড় পাত্রগুলো পরিষ্কার করে রাখুন।
মাংস সংরক্ষণ
রান্না করা মাংস সংরক্ষণের জন্য় বক্স কিনে রাখতে পারেন। নিজের জন্য় রাখা কাঁচা মাংস সংরক্ষণের জন্য বাক্সের বদলে ফুড গ্রেডের প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা ভালো। ফ্রিজে রাখার আগে, ধোয়ার পর পানি ভালো করে ঝরিয়ে নিন। প্যাকেটগুলো খুব বেশি বড় করবেন না। এতে বরফ হওয়া মাংস রান্নার জন্য় পরে বের করে নিতে সমস্যা হবে। ছোট ছোট ব্যাগে সংরক্ষণ করুন। প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে কোন মাংস তা লিখে রাখুন। যখন যেটা প্রয়োজন সেভাবেই রান্না করুন।
কোরবানির পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
মাংস কাটা বা ভাগ করার সময় শরীর, কাপড় ও ঘরের মেঝেতে রক্ত লেগে যায়। রক্ত সরাতে মেঝে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। গরম পানি, জীবাণুনাশক এবং ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর জন্য় এগুলো আগেই কিনে হাতের কাছে রাখুন। মাংস ভাগ করার সময় গ্লবস পরে নিতে পারেন। এতে ত্বকে চুলকানি হবে না। অবশ্যই মাস্ক পরবেন। প্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলো আগেই কিনুন।
মসলা কিনুন
ঈদ উপলক্ষে কোরবানির মাংসের বিভিন্ন পদ রান্না হয়। বিভিন্ন পদ রান্নার জন্য় বিভিন্ন মসলা কিনে রাখতে পারেন। বিরিয়ানি মসলা, তেহারি মসলা, কাবার মসলা, কালাভুনা মসলাসহ এমন অনেক পদের মসলা বাজারে পাওয়া যায়। তবে প্রয়োজনীয় মসলাগুলো আগে কিনুন। যেমন আদা, রসুন, গরম মসলা, জিরা। এগুলো আগে কিনে বেটে রাখুন। অথবা গরম মসলা গুঁড়া করে রাখতে পারেন। আস্ত গরম মসলাগুলোও কিনে কৌটায় রেখে দিন। এগুলো রান্নাঘরে হাতের কাছেই রাখুন।
ঘর পরিষ্কার
ঈদ উপলক্ষে পুরো ঘর পরিষ্কার করে নিন। পুরোনো জিনিস পাল্টে নতুন জিনিস কিনে নিতে পারেন। ঘরের পর্দা, চাদর ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
ঈদের অন্যান্য বাজার
ঈদ মানেই মিষ্টি মুখ। তাই ঈদে উপলক্ষে সেমাই, চিনি, সুগন্ধি চাল, ঘি, তেল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বাজার আগেই করে রাখুন। কোল্ড ড্রিংকস কিনে রাখতে পারেন। বাচ্চাদের পছন্দের খাবারগুলোও কিনে রাখুন।
জীবাণুনাশক উপাদান
কোরবানির ঈদের দিন ছোট কিংবা বড় দুর্ঘটনা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বঁটি-ছুরি দিয়ে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কোরবানির পশুর হাড়ের খোঁচা থেকেও হাত কেটে যেতে পারে। এর জন্য় জীবাণুনাশক উপাদান যেমন ডেটল কিংবা স্যাভলন কিনে রাখুন।
চুন
কোরবানির ঈদে চুন কিনে রাখবেন। অনেকেই এই জিনিসটির কথা ভুলে যান। এটা মনে করে কিনে রাখবেন। কারণ ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে চুন প্রয়োজন হয়। কোরবানির সরঞ্জামাদি কেনার সময় এক কৌটা চুনও কিনে রাখুন।