• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রান্নাঘরে আগুন লাগলে কী করবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৩, ১২:৪৯ পিএম
রান্নাঘরে আগুন লাগলে কী করবেন

বাসাবাড়িতে অসাবধানতায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক  ও সাবধানতা অবলম্বন করলে  অনেক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।  গ্রাম ও শহরে রান্নাঘরে আগুনের কারণ ও ধরন ভিন্ন ভিন্ন। চলুন জেনে নেওয়া যাক রান্নাঘরে আগুন লাগলে কী করবেন।


 

শরীরের পোশাক
রান্না করার সময় অবশ্যই ফিটিং পোশাক পরুন। বেশি ঢিলে পোশাক পরলে অসাবধানতায় পোশাক আগুনের সঙ্গে লেগে অথবা কাপড় গরম হতে হতে এক সময় পোশাকে আগুন ধরে যেতে পারে।

রান্নার স্থান সব সময় পরিষ্কার রাখা
চুলার আশপাশে সব সময় পরিষ্কার রাখুন। যেসব দাহ্যবস্তু কম তাপে আগুন লেগে যায় তা দূরে রাখুন। চুলার পাশে এলোমেলোভাবে নোংরা জিনিসপত্রসহ রান্নার সরঞ্জাম রাখবেন না। যত ধরনের কাঠের রান্না করার সরঞ্জাম আছে তা স্টোভ/বার্নারের কাছ থেকে ১ মিটার থেকে ৩ ফুট দূরে রাখুন। এমনকি চুলা, বার্নার, স্টোভ রান্না করার পরপরই পরিষ্কার করে রাখুন।

বাতাস চলাচল 
বাজারের ব্যাগ, রান্না করার হ্যান্ড গ্লোভস, তোয়ালে, প্লাস্টিক, কাগজ, খাবারের সঙ্গে নিয়ে আসা প্যাকেট এ রকম সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। এ ছাড়া রান্নাঘর যেন বদ্ধ না হয়ে প্রচুর পরিমাণে বাতাস চলাচল করতে পারে তা নিশ্চিত করুন। রান্না শুরুর আগে ও করার সময় অ্যাগজস্ট ফ্যান চালু রাখুন।

রান্নাঘর স্টোর নয়
রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া স্টোর না করাই ভালো। এ ছাড়া গ্রামে রান্না ঘরগুলো ওপরে টিন এবং চারপাশে পাটখড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে চুলা পাটখড়ির বেড়ার খুব কাছে বানানোর কারণে প্রায়ই বেড়ায় আগুন লেগে যায়। এ ছাড়া চুলার কাছেই রান্না করার খড়িগুলো রাখা হয়। এমনও হয় কাঁচা খড়িগুলো চুলার কাছে রেখে শুকানো হয়, যা আগুনের সূত্রপাত করে।


সচেতন অবস্থায় রান্না
ঘুম ঘুম ভাব বা অ্যালকোহল পান করে রান্না করবেন না। সতর্ক অবস্থায় রান্না করুন। কোনো ওষুধ নেওয়ার কারণে ঘুম ভাব লাগলে রান্না করতে যাবেন না। ক্লান্তি নিয়েও রান্না করবেন না।

রান্নাঘরেই থাকুন
যতক্ষণ রান্না করবেন ততক্ষণই রান্নাঘরে থাকার চেষ্টা করুন। এমন দূরত্বে যাবেন না তাতে দুর্ঘটনা ঘটলে বুঝতে পারবেন না। যদি কোথাও যেতে হয় তাহলে স্টোভ/চুলা বন্ধ করে যান। কোনোভাবেই চুলায় রান্না বসিয়ে অন্য ঘরে কোনো কাজ করবেন না। এখন পর্যন্ত রান্নাঘরে রান্না বসিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি আগুনের দুর্ঘটনা ঘটেছে।


কড়াইতে আগুন
যদি কড়াইতে আগুন লেগে যায় মাথা ঠান্ডা রাখুন। ঢাকনা দিয়ে প্যান/কড়াই ঢেকে দিন। যতক্ষণ না পাতিল ঠান্ডা না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ঢেকেই রাখুন। কোনোভাবেই প্যান বা কড়াই বার্নার/চুলা থেকে টান দিয়ে ফেলে দেওয়া বা সরাবেন না। এতে আগুন চারপাশে ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তেলে অতিরিক্ত তাপ
বর্তমানে বাজারে ফায়ার ব্লাংকেট পাওয়া যায় তা কিনে রাখতে পারেন। আগুনের ওপর ঢেকে দিলে আগুন নিভে যাবে। তবে আগুন আরও বড় হয়ে গেলে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে আসুন। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিন। তেল অতিরিক্ত তাপে কখনোই রান্না করবেন না। তেলে অতিরিক্ত তাপ দিলে প্রথমে ধোঁয়া তারপর ধপ করে আগুন ধরে যায়।

খেয়াল রাখুন কী রান্না করছেন
কী রান্না করছেন তা খেয়াল রাখুন। মাঝে মাঝে তা চেক করুন। ওভার হিটসহ অন্যান্য বিষয় খেয়াল করুন। আপনি সচেতন না থাকলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। শহর কিংবা গ্রামে দেখা যায় আড্ডা দিতে দিতে রান্না করে। এতে মনোযোগ/সচেতনতায় ঘাটতি তৈরি হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে। মনে রাখবেন আগুন লাগলে শুধু আপনারই ক্ষতি হচ্ছে না আপনার প্রতিবেশীরও ক্ষতি হচ্ছে যার দায়ভার তার ছিল না।

ওভেনে আগুন
ওভেনে আগুন লাগলে প্রথমেই ওভেনের ইলেকট্রিসিটি লাইন বন্ধ করে দিন। কোনোভাবেই ওভেনের শাটার/ডোর খুলবেন না যতক্ষণ না আগুন নিভে না যায়। এরপর সার্ভিস না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই আবার চালু করবেন না। মাইক্রোওভেনে কখনোই অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা মেটাল অবজেক্ট ব্যবহার করবেন না। যখন খাবার ওভেন থেকে বের করবেন অবশ্যই সাবধানে বের করবেন। তা না হলে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

গ্রিল করার সময়
হোটেল বা যেখানেই গ্রিল করবেন অবশ্যই সচেতনভাবে কাজ করুন। যদি গ্যাস দিয়ে গ্রিল করেন তাহলে প্রথমেই দেখে নিন সিলিন্ডারে কোনো লিক আছে কি না। বারান্দায় কখনো গ্রিল করবেন না। কোনো খোলা এলাকায় করবেন। তবে আশপাশে কোনো কিছুতে আগুন লেগে যেতে পারে, এমন দাহ্যবস্তু দূরে রাখুন। এমন স্থানে গ্রিল করবেন না যেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করছে বা এমন জায়গায় যেখানে মানুষের আনাগোনা খুব বেশি। যেমন খেলার মাঠ, বাজার, রাস্তার পাশে।

হোটেলের রান্না 
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হোটেল/ফুডকোর্টে আগুন লাগে রান্নাঘর থেকে। দেখা গেছে হোটেল/ফুডকোর্টের রান্নাঘরটি থাকে একরকম স্টোরের মতো। রান্নাঘর থাকতে হবে একেবারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। চুলা/বার্নারের কাছে কোনো দাহ্যবস্তু রাখা যাবে না। স্টোর কাম রান্নাঘর করা যাবে না। ফুডকোর্টের প্রতিটি দোকানেই থাকে গ্যাস সিলিন্ডার। এই গ্যাস সিলিন্ডার কেনার সময় অবশ্যই সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখে কিনতে হবে। গ্যাসলাইনের পাইপে কোনো লিকেজ আছে কি না, তা চেক করতে হবে। তা না হলে এক একটি দোকান হবে এক একটি গ্যাস বোমা।

এ ছাড়া যতক্ষণ রান্না করবেন, ততক্ষণই সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় হোটেলগুলোতে গ্যাসের চুলা একটু কমিয়ে পানি গরম করা হয় আর এটা দিনরাত চলতে থাকে। এটা করা যাবে না এতে আগুন লাগার ঝুঁকি থেকে যায় প্রবল।

গ্যাসের চুলা ব্যবহার
গ্যাস অতিরিক্ত বাড়িয়ে তারপর বার্নারে আগুন দেওয়া হয়। এতে হুট করেই বড় আগুনের সূত্রপাত হয়। এ জন্য কম বাড়িয়ে তারপর আগুন দিন। এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ‌এ ছাড়া দেখা যায় শীতের সময় গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রেখে ভিজে কাপড় শুকানো হয় যা কোনোভাবেই করা যাবে না। গ্যাসের চুলাতে আগুন লাগার বড় একটি কারণ এই কাজটি।


রান্নাঘরে ঢুকে নাক ব্যবহার
রান্নাঘরে ঢুকে যদি গ্যাসের গন্ধ পান কোনোভাবেই বৈদ্যুতিক সুইচ ব্যবহার করবেন না বা গ্যাসের চুলায় আগুন দেবেন না। সব সময় সবার আগে ঘরে/রান্নাঘরের দরজা, জানালা খুলে দিন। বাতাস চলাচল করুক কমপক্ষে ৫ মিনিট। দীর্ঘদিন পর ঘরে ঢুকে জানালা দরজা খুলে দেয়াটা অভ্যাসে পরিণত করুন।

আগুন ব্যাপকতা বেড়ে গেলে দ্রুত রান্নাঘরের দরজা বা ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে বের হয়ে আসুন। ফায়ার সার্ভিসকে কল করুন। ভবনের অন্যদের জানান যে আগুন লেগেছে, যাতে সবাই বের হয়ে আসতে পারে। বের হওয়ার সময় মূল্যবান জিনিসপত্র নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে বের হতে দেরি হয়ে যেতে পারে।

Link copied!