ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম একটি হলো হজ। আর এই হজ পালিত হয় জিলহজ মাসে, যা ইসলামী ক্যালেন্ডারের শেষ মাস। এ মাসের প্রথম ১০ দিন অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিনগুলো হলো জিলহজের প্রথম দশ দিন।” (সহিহ বুখারি)
বিশেষ করে জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠা থেকে শুরু করে ঈদের দিন কোরবানি দেওয়া পর্যন্ত সময়টাতে কিছু নির্দিষ্ট আমল করার মাধ্যমে অনেক সওয়াব অর্জন করা যায়। চলুন জেনে নেই, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ের আমলসমূহ কী কী_
নিয়ত ও ইচ্ছার সংশোধন
জিলহজের চাঁদ দেখা মাত্রই সঠিক নিয়ত স্থির করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমল শুরু করতে হবে।
গুনাহ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প নিন। তাওবা ও ইসতিগফার শুরু করুন।
অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহলিল ও তাসবিহ পাঠ
জিলহজের ১ম দিন থেকে ১০ তারিখ (ঈদের দিন) পর্যন্ত বেশি বেশি "তাকবিরে তাশরিক" বলা সুন্নত। এটি হলো:
تَكْبِيْرُ التَّشْرِيْق:
اللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَاللّٰهُ أَكْبَرُ، اللّٰهُ أَكْبَرُ، وَلِلّٰهِ الْحَمْدُ
এই তাকবির বেশি বেশি বলা উচিত ৯ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসরের পর পর্যন্ত প্রতিটি নামাজের পর।
এর পাশাপাশি প্রতিদিনের যিকিরের অংশ হিসেবে
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলতে হবে।
নফল রোজা রাখা
জিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত নফল রোজা রাখা খুব ফজিলতপূর্ণ। হাদীস অনুযায়ী, রাসুল (সা.) এই দিনগুলোর রোজাকে আল্লাহর প্রিয় আমল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ— এই দিনে রোজা রাখা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, আরাফার দিনের রোজা গত বছরের ও আগত বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়। (মুসলিম)
সালাত আদায় ও কোরআন তিলাওয়াত
ফরজ নামাজ যথাসময়ে জামাতের সাথে আদায় করুন। বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করুন – যেমন তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত ও আওয়াবিন।প্রতিদিন কিছু সময় কোরআন তিলাওয়াত করুন। তিলাওয়াতের মাধ্যমে আত্মা প্রশান্ত হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়।
কোরবানির প্রস্তুতি ও নিয়ত
যারা কোরবানি দেবেন, তারা জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবেন কোরবানি করার আগ পর্যন্ত। এটি রাসুল (সা.) এর সুন্নত।
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি কোরবানি করতে চায়, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে তার চুল ও নখ না কাটে।” (মুসলিম)
দোয়া, ইসতিগফার ও তাওবা
এই দশ দিনে দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশ ও উম্মাহর জন্য বেশি বেশি দোয়া করুন। অতীতের গুনাহের জন্য তাওবা করুন।
সদকা ও দান করা
গরিব-অসহায়দের সাহায্য করা এই দিনগুলোর অন্যতম উত্তম আমল। যারা হজ করতে পারেন না, তারা সাধ্যমত দান-সদকা করে সওয়াব অর্জন করতে পারেন।
ঈদের দিন কোরবানি দেওয়া
১০ জিলহজ ঈদের দিন। এই দিনে অন্যতম বড় আমল হলো কোরবানি করা।
হাদীস অনুযায়ী, “কোরবানির দিনে মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো পশু কোরবানি করা।” (তিরমিজি) কোরবানির পশুকে যত্ন করুন, সুন্দরভাবে জবাই করুন এবং তার গোশত ন্যায্যভাবে বণ্টন করুন।