• ঢাকা
  • শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তী সরকার না তত্ত্বাবধায়ক সরকার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তী সরকার না তত্ত্বাবধায়ক সরকার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

‘পদত্যাগের কথা ভাবছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস’, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিষয়টি সর্বত্র বেশ জোরেশোরেই আলোচিত হচ্ছে। তার পদত্যাগের আলোচনা সামনে আসায় এই সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়েই অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, এরপর আইনি জটিলতা কী হতে পারে, কীভাবে নতুন সরকার গঠন কবে, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে আলোচনার শুরু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমে।

সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে অধ্যাপক ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে দেশের সরকারব্যবস্থা কোন পথে চলবে? এটি কি পুনরায় গঠন করা যাবে? এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুনর্গঠনের সুযোগ আইনে কতটা আছে, এই প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন আইনজীবীরা।

আইনজীবীদের কেউ কেউ বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে দলগুলোর সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। ফলে এখন অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করলে কোনো সাংবিধানিক সংকট হবে না; তখন নতুন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসবে।

তাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, অধ্যাপক ইউনূস চলে গেলে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে দিতে পারেন, যে সরকার শুধু নির্বাচন করবে।


সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, আইনে কী বলা আছে, তা এখন ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কারণ ‘আইন অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না।’

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।


তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল করেছে হাইকোর্ট। যে অংশটি বাতিল করা হয়েছে তার ফলে দেশের সংবিধানে আবারও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার পথ তৈরি হয়েছে।
শাহদীন মালিক বলেন, অধ্যাদেশ দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে না এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল করে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানোর সুযোগ করা হলো, এই সংশোধনী করার ক্ষমতা তো সংসদ ছাড়া কারো নাই। তাই এখন জোড়াতালি দিয়ে চলতে হবে। এখন আর আইনের ভূমিকা নেই।

আইন অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না। সব আইনের বাইরে হচ্ছে। তাই আইনের প্রশ্ন এখন অবান্তর।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। তখন আদালত উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করানোর অনুমতি দেয়। 

শাহদীন মালিক বলেন, ‘রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে সংবিধানের বাইরে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আপিল বিভাগের বড় দুই রায়ে বলা আছে— এটি করা যায় না। কোনো কিছুর দোহাই দিয়ে যা অসাংবিধানিক, তাকে সাংবিধানিক বলা যাবে না।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদও মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একটি ‘শূন্যতা’ তৈরি হয়েছিল। তখন প্রয়োজনের তাগিদে একটি সরকার গঠন করা হয়েছে এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে কেউ কোনো আপত্তি করে নেই, এটির আইনগত প্রশ্নও তখন উত্থাপন হয়নি।

তবে মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে ‘কোনো সাংবিধানিক সংকট হবে না’ উল্লেখ করে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘উনি পদত্যাগ করলে নতুন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসবে। উনি যদি থাকেনও, নির্বাচন করতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাম দিয়ে সরকার গঠন করা যাবে।’

আইনজীবী মনজিল মোরসেদের মতে, গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজন ছিল। এখন তা নেই। এখন নির্বাচন দরকার। তাই নির্বাচন যদি ‘নেসেসিটি’ হয়, তাহলে নতুন করে আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দরকার নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করলেই হবে।

তিনি পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিলের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘নির্বাচন দিতে গেলে এই সরকারের আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকার সুযোগ নাই। তাদেরকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। কারণ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। আইনে এভাবেই আছে যে, নির্বাচন করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।’

এই আইনজীবীর মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বর্তমানে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদও থাকতে পারে। আবার, রাষ্ট্রপতির মনোনয়নক্রমে নতুন করেও পরিষদ সাজানো যেতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনের অন্তত ৯০ দিন আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সময় আদালত থেকে রেফারেন্স আনা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ওই রেফারেন্সের প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন মনজিল মোরসেদ।

তবে মুহাম্মদ ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে তার উপদেষ্টা পরিষদ কি বহাল থাকবে? জবাবে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ওনাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করেছেন যে আমার সঙ্গে কাজ করেন। উনি না থাকলে অন্যদেরও থাকার সুযোগ নাই।’

একই সঙ্গে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান যদি অন্য উপদেষ্টাদের রাখতে চান, রাখতে পারেন।

আইনজীবী শাহদীন মালিকও বলেন, ‘ইচ্ছামতো করলে তো যা ইচ্ছা তা করা যায়।’ তবে তিনি মনে করেন, মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করলে পরবর্তী সরকার প্রধান নির্বাচনের জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে একজন ব্যক্তির ব্যাপারে ঐকমত্যে যেতে হবে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

Link copied!