‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার মাঝখান থেকে সরে দাঁড়ালেন মিস ইংল্যান্ড প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট মিলা মেগি।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার ৭৪ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম যিনি ‘নৈতিক কারণ’ দেখিয়ে মাঝপথে এই গ্ল্যামারাস আয়োজন থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন।
ভারতের হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিতব্য ৭৪তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা থেকে হঠাৎ করেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মিস ইংল্যান্ড মিলা মেগি। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান, পরে ভারত ত্যাগ করে যুক্তরাজ্যে চলে যান।
প্রতিযোগিতার মাঝখান থেকে কেন তিনি সরে দাঁড়ালেন, শুরুতে সেটা না বললেও পরে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত কারণ ব্যাখ্যা করেন।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ আয়োজকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে মেগি বলেন, প্রতিযোগীদের এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা তাকে ‘যৌনকর্মীর মতো’ অনুভব করিয়েছে। এমনকি তিনি আরও বলেন, তাকে ‘নাচানো বানর’ মনে হয়েছে।
আসলে মেগির সাথে কী ঘটেছিল, যার জন্য তিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন? এ বিষয়ে মিলা মেগি জানান, ৭ মে সারাদিন হায়দরাবাদে একটি প্রচারমূলক ইভেন্টে তাকে এবং অন্যান্য প্রতিযোগীদের বিলাসবহুল পোশাকে— উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয়।
তবে তার কাছে সবচেয়ে অপমানজনক অভিজ্ঞতা ছিল এক সন্ধ্যায় তাকে মধ্যবয়স্ক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে টেবিলে বসে তাদের ‘মনে রাখার মতো সময়’ উপহার দিতে বলা হয়।
“আমাদের বলা হয়েছিল তাদের সঙ্গে পুরো সন্ধ্যা কাটাতে। মনে হচ্ছিল যেন আমাদের পণ্য হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। আমি এখানে এসেছি সমাজসেবার বার্তা দিতে, নিজের উদ্যোগ তুলে ধরতে— কিন্তু এখানে আমাদের ব্যবহার করা হয়েছে অন্য উদ্দেশ্যে। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, আমি যেন যৌনকর্মী।”— সাক্ষাৎকারে এমনটা বলেন মিলা মেগি।
তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে সবার উপস্থিতিতে সমাজসেবামূলক কাজ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু উপস্থিত পুরুষেরা তাতে আগ্রহী ছিলেন না। বরং এমন আচরণ করছিলেন যেন তারা প্রতিযোগীদের ‘শুধু বসিয়ে রাখার জন্য’ কিংবা ‘মনোরঞ্জনের জন্য’ সময় কাটাতে চেয়েছেন। অন্যের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহার করার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি মেগি।
মেগি আরো অভিযোগ করেন, প্রতিযোগিতার আয়োজকদের একজন তাকে ‘বোরিং’ বলেছিলেন এবং একবার মুখের সামনে হাততালি দিয়ে নির্দেশ দেওয়ার চেষ্টা করেন।
“আমার সামনে হাততালি দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে বাকিদের বললেন, ‘শোনো’। এটা খুবই অসম্মানজনক ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আমরা প্রাপ্তবয়স্ক নই, বরং ছোট ছেলেমেয়ে।”
১৬ মে মেগি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান এবং যুক্তরাজ্যে ফিরে যান। তার পরিবর্তে যুক্তরাজ্য থেকে এখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন ‘মিস ইংল্যান্ড’-এর রানার-আপ ও বর্তমান মিস লিভারপুল শার্লট গ্রান্ট (২৫)।
মেগি দীর্ঘদিন ধরেই মিস ওয়ার্ল্ডের সাঁতারের পোশাক পর্ব বাতিল করে তার পরিবর্তে সিপিআর (হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে জীবনরক্ষা কৌশল) ও অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা দিয়ে প্রতিযোগী বাছাইয়ের পক্ষে কথা বলে আসছিলেন। এক পারিবারিক দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি সিপিআর শিক্ষার প্রচারক হয়ে উঠেন।
মিস ইংল্যান্ডের পরিচালক অ্যাঞ্জি বিসলে এক বিবৃতিতে বলেন, “মিলা মেগি ব্যক্তিগত কারণে যুক্তরাজ্যে ফিরে গেছেন। আমরা তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করি—স্বাস্থ্যই সবকিছুর আগে।” তবে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। –নিউ ইয়র্ক পোস্ট