• ঢাকা
  • শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

জোর করে ছাত্রীর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ১০:২১ এএম
জোর করে  ছাত্রীর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে
ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রীর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মাদ্রাসার এই ছাত্রীর নাম মোছা. তাছলিমা খাতুন (১১)।

বয়সে ছোট হলেও বড় চুলের কারণে মা-বাবা আদর করে তাকে ডাকেন বাহারী চুল নামে। চুলের খোপা বাঁধলে প্রতিবেশীরা বলতেন, ‘তাছলিমার মাথার চেয়ে খোপা বড়।’ তাছলিমার সেই চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে ঘটে এই ঘটনা। সেদিন দুপুরের খাবার দিতে গিয়ে তাছলিমার মাথা ন্যাড়া দেখতে পান বলে দাবি করেছেন তার মা আবেদান বেগম। সবশেষ বৃহস্পতিবার ঘটনাটি জানাজানি হয়। তাছলিমা তাড়াশের কৃষ্ণাদিঘী গ্রামের তালিমুল নিসা মহিলা হাফিজিয়া মাদ্রাসার কেতাব বিভাগের ছাত্রী।

তাছলিমা অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে মাদ্রাসার একজন নারী শিক্ষক তাছলিমাকে বলেন, তোমার মাথায় উকুন। বড় চুলের জন্য উকুন হয়েছে। এসো মাথা ন্যাড়া করে দেই।

কিছুদিনের মধ্যে আবার চুল বড় হয়ে যাবে। তারপর প্রথমে কাঁচি দিয়ে চুল ছোট করে দেন তিনি। পরে বাজার থেকে শ্যাম্পু কিনে আনেন মাদ্রাসার বড় হুজুর হাফেজ মাওলানা মো. আব্দুল মারুফ। তারপর জোর করে ধরে দুই শিক্ষক তাছলিমাকে ন্যাড়া করে দেন। 

তাছলিমার মা আবেদান বেগম বলেন, প্রতিদিন তিন বেলার খাবার পৌঁছে দিই আমি। ওই দিন মাদ্রাসায় খাবার দিতে গিয়ে দেখি মেয়ের মাথা ন্যাড়া। তার মাথায় তখনও রক্ত ঝড়ছে। পরে আমিও চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

তাছলিমার প্রতিবেশী রুনা পারভিন বলেন, তাছলিমার মাথার চুল ছিলো কোমর পর্যন্ত। যখন খোপা বাঁধতো মাথার চেয়ে চুলের খোপা দেখতে বড় লাগতো।

 তাছলিমার বাবা সমাজ আলী বলেন, ভ্যান চালানোর টাকায় আমাদের সংসার চলে। বৃদ্ধ মা, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচজনের পরিবার। অভাব-অনটন লেগেই থাকে সংসারে। তারপরও মেয়ের চুলের যত্নে কখনো অবহেলা করিনি। দুই ধরনের তেল কিনে দিতাম মেয়ের চুলে দেওয়ার জন্য। আমাদের না জানিয়ে কেন মেয়েকে ন্যাড়া করা হলো? আমার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করেয়েছি। মাদ্রাসা থেকে একবার খবরও নিলো না। উল্টো মাদ্রাসা থেকে আমার মেয়েকে বের করে দেওয়ার পায়তারা চলছে। আমি বিচার চাই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই মাদ্রাসার বড় হুজুর হাফেজ মাওলানা মো. আব্দুল মারুফ। তিনি বলেন, তাছলিমার মাথা আমরা ন্যাড়া করে দেইনি। সে ও তার সহপাঠিরা মিলে এই কাজ করেছে। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, এই ঘটনার তদন্ত করে করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। যদি সতত্যা পাওয়া যায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!