• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

বৃষ্টিতে যেভাবে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম
বৃষ্টিতে যেভাবে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি
ছবি: সংগৃহীত

প্রকৃতির সৌন্দর্যের এক অনন্য উপহার হলো বৃষ্টি। যা শুধু আবহাওয়ার পরিবর্তনই নয়, বরং জীবনের নতুন সূচনা, মৃতপ্রায় পরিবেশে প্রাণ সঞ্চার এবং মনকে প্রশান্ত করার এক স্বর্গীয় স্পর্শ। অঝোরধারার বৃষ্টিতে প্রকৃতিতে ঘটে যায় এক অসাধারণ পরিবর্তন। ঘুমন্ত প্রকৃতি যেন হঠাৎ করেই ফিরে পায় প্রাণ।

বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা পড়তেই শুকনো ও ধুলোময় মাটি যেন প্রাণ ফিরে পায়। মাটির গায়ে পানি পড়লে সেই পরিচিত "পেট্রিকর" গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রকৃতির এক দুর্লভ সৌরভ। মাটি ভিজে গেলে তাতে জীবাণু, কেঁচো ও নানা অনুজীবের কার্যক্রম শুরু হয়, যা মাটিকে করে তোলে উর্বর। গ্রামাণঞ্চলে চাষাবাদের উপযুক্ত হয়ে ওঠে জমি। গাছের মূল সহজে পানি শোষণ করতে পারে, ফলে গাছের বৃদ্ধিও ঘটে দ্রুত।

গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন গাছপালা হলুদ, বিবর্ণ ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন বৃষ্টিই তাদের জন্য হয়ে ওঠে নবজীবনের বার্তা। বৃষ্টির পানি সরাসরি গাছের পাতা ও শিকড়ে পৌঁছে দেয় প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা। বৃষ্টির সঙ্গে মিশে থাকা নাইট্রোজেন গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। পাতা হয়ে ওঠে চকচকে সবুজ, ফুল ফোটে, ডালপালা বেড়ে যায়। এ এক প্রাণবন্ত দৃশ্য— যেন প্রকৃতি নতুন সাজে নিজেকে সাজিয়ে তোলে।

বৃষ্টির আগমনে শুধু উদ্ভিদ নয়, প্রাণীরাও সাড়া দেয় নতুন জীবনের আহ্বানে। ব্যাঙ, কাঁকড়া, শামুকের মতো জলপ্রেমী প্রাণীরা বৃষ্টির দিনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। পাখিরা ডানা মেলে খেলা করে, গাছের ডালে বসে গান গায়। নদী, খাল, বিল, পুকুরে পানির স্তর বেড়ে গিয়ে জলজ প্রাণীদের জন্য নতুন আশ্রয় সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি প্রাণীকুলের জন্য হয়ে উঠে এক অপার আশীর্বাদ।

বৃষ্টির পানি পরিবেশের উষ্ণতা হ্রাস করে। দীর্ঘ সময়ের খরা ও গরমের পর বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে আসে। বাতাস হয় ঠাণ্ডা ও নির্মল। বাতাসে থাকা ধূলিকণা ধুয়ে গিয়ে বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে পরিবেশ।

কৃষিনির্ভর দেশে বৃষ্টির পানি ফসলের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আমন ধান, পাট, সবজি— সবই বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল। কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে যখন আকাশ ভরে নামে বৃষ্টি। প্রকৃতির প্রাণ ফিরে পাওয়ার এই প্রক্রিয়া অর্থনীতিকেও গতিশীল করে তোলে।

বৃষ্টির পর অনেক গাছেই ফুল ফোটা শুরু হয়। শিউলি, কদম, বেলি প্রভৃতি বর্ষার ফুলগুলো প্রকৃতির রূপ বাড়িয়ে তোলে। শুরু হয় আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু প্রভৃতি গ্রীষ্মকালীন ফলের ফসল কাটার উৎসব। নতুন ফলগাছের চারা রোপণও শুরু হয়।

প্রকৃতির এই পরিবর্তন মানুষের মনেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বৃষ্টির শব্দ, ঠাণ্ডা বাতাস ও সবুজ পরিবেশ মানুষের মনকে প্রশান্ত করে। সাহিত্য, গান ও চিত্রকলায় বর্ষা বারবার এসেছে প্রেম, বিরহ ও প্রকৃতির রূপক হিসেবে। যা আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। 

বৃষ্টি হচ্ছে জীবনচক্রের পুনরাবৃত্তি এবং নতুন করে বেঁচে ওঠার আহ্বান। এক ফোঁটা বৃষ্টিতে যে প্রাণ জেগে ওঠে মাটির গভীরে, পাতার কোণে ও হৃদয়ের গহীনে তা সত্যিই অতুলনীয়।

Link copied!