ইসলাম ধর্মে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হজরত ইসমাইল (আঃ)-এর আত্মত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্যের স্মরণে কোরবানি দেওয়া হয়। এটি মুস্তাহাব ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। কোরবানির মূলত হিজরি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়। যারা সামর্থ্য রাখেন, তারা এই সময়ে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে পশু কোরবানি দেন। অনেক সময় একেকটি বড় পশু এককভাবে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হয় না। তখন কয়েকজন মিলে ভাগ করে কোরবানি করা হয়। একে বলা হয় ভাগে কোরবানি।
ভাগে কোরবানি বলতে বোঝায়, একটি বড় পশু—যেমন গরু, মহিষ বা উট—যেখানে সাতজন ব্যক্তি পর্যন্ত শরিক হয়ে কোরবানি দিতে পারেন। এটি শরিয়তসম্মত এবং সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
হজরত জাবির (রা.) বলেন,“আমরা হজে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি গরু সাতজন মিলে কোরবানি দিয়েছিলাম।”
— (সহিহ মুসলিম)
ভাগে কোরবানি দেওয়ার কিছু শর্তাবলি রয়েছে। যা যথাযথভাবে পূরণ করেই কোরবানি আদায় করতে হয়।
একই উদ্দেশ্য থাকা
যারা একটি পশু ভাগে কোরবানি দেবেন, তাদের সবার নিয়ত কোরবানি হওয়া জরুরি। কেউ কোরবানির পাশাপাশি শুধু গোশতের উদ্দেশ্যে শরিক হতে পারবেন না। যদি একজনও এমন থাকে যার নিয়ত কোরবানি নয়, তাহলে পুরো কোরবানি বাতিল হয়ে যাবে।
সর্বোচ্চ সাতজন
একটি বড় পশুতে সর্বোচ্চ সাতজন ভাগ নিতে পারবেন। সাতজনের কমেও হতে পারে—যেমন দুই, তিন বা পাঁচজন। কিন্তু সাতজনের বেশি হলে তা জায়েজ হবে না।
সমপরিমাণ বা ভিন্ন ভিন্ন অংশ হতে পারে
প্রত্যেকে সমান পরিমাণ নেবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ অর্ধেক, কেউ এক-চতুর্থাংশ, কেউ এক-সপ্তমাংশ নিতে পারেন—তবে তা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকতে হবে।
অংশের হিসাব নির্দিষ্ট থাকা
ভাগ করার সময় কে কতটুকু অংশ নিচ্ছেন, তা পরিষ্কারভাবে জানা এবং নির্ধারিত থাকতে হবে। কোনো অস্পষ্টতা থাকা উচিত নয়।
হালাল উপার্জনের অর্থ ব্যবহার করা
কোরবানির পশু কেনার টাকা হালাল উপার্জন হতে হবে। হারাম উপার্জনের টাকা দিয়ে কোরবানি করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভাগে কোরবানি দেওয়ার উপযুক্ত পশু
ভাগে কোরবানি শুধু গরু, মহিষ বা উটের মতো বড় পশুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা এক ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট, তাই এগুলো ভাগে দেওয়া যায় না।