• ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২, ১০ মুহররম ১৪৪৬

নজরুলের যত ‘নাম‍‍’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২২, ১০:১৯ এএম
নজরুলের যত ‘নাম‍‍’

ছোটবেলা থেকেই কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে আমাদের পরিচিতি। পাঠ্যবইয়ে মহান এই কবি জীবনবৃত্তান্ত জানার সুযোগ হয়। বই পড়ে জানা যায় কবির সাধারণ জীবনের চিত্র। সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প। কবির সঙ্গে পরিচিতি তো আগেই হয়েছে। তবে কবির ছোট ছোট কথা, তার চল-ধরন সবকিছুকে জানতে পেরোতে হয়েছে পাঠ্যবইয়ের গণ্ডি। বিভিন্ন বইয়ে প্রকাশ হয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের কথা। পরিচয়ের সঙ্গে কবিকে জানার সুযোগ পেয়েছে নতুন প্রজন্ম।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম, এই নামেই তিনি সর্বজনীন পরিচিত। তবে বাবা-মায়ের রাখা এই নামের বাইরেও রয়েছে তার আরও নাম। জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তেই আদর আর শ্রদ্ধার সঙ্গে কবিকে এসব নামে ডাকা হতো। তার প্রকৃত নামের বাইরে ওই সব নামেও বেশ পরিচিতি ছিল কবি।

কবির জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, নানা নামে ডাকা হতো তাকে। ‘দুখু মিয়া’ থেকে ‘জাতীয় কবি’র খেতাবও পেয়েছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার সৃষ্টিশীলতা চমকে দিয়েছে গুরুজনদের। কবিতা ও গানে তার অনবদ্য সৃষ্টি আজও স্মরণ করে নতুন প্রজন্ম।

নজরুলের মা ছিলেন জাহেদা খাতুন। তিনি ছিলেন নজরুলের বাবা কাজী ফকির আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী। দারিদ্র্যের প্রবল কশাঘাতে কাটে নজরুলের শৈশব। মনে করা হয়, দারিদ্র্যের জন্যই কবির নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। কিন্তু পেছনের গল্পটা ছিল ভিন্ন। কবিকে ‘দুখু মিয়া’ নাম দিয়েছিলেন তার মা জাহেদা খাতুন। জানা যায়, চার ছেলের অকাল মৃত্যুর পর নজরুলের জন্ম হয়। তাই শিশুকালেই নজরুলের নাম রাখা হয় ‘দুখু মিয়া’।

kazi nazrul islam

ছেলেবেলায় কবি ‘তারা ক্ষ্যাপা’ নামেও পরিচিত ছিলেন। এই নামে ডাকতেন তার চারপাশে সবাই। পরে ‘নুরু’ নামও ব্যবহার করেছেন কবি। তবে স্থানীয়দের অনেকেই তাকে ‘নজরআলি’ নামেও ডাকতেন।

১৯১৭ সালের মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষা না দিয়ে কবি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসাবে যোগ দেন। করাচি সেনানিবাসে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে ছিলেন তিনি। কিন্তু তরুণ নজরুলের সাহিত্য-সংগীত অনুরাগী মন তখনো জাগ্রত ছিল। অদম্য আগ্রহে পথ খুঁজে নেয় তার মন। প্রাণবন্ত  হৈ-হুল্লোড়ে আসর জমাতেন সেনানিবাসে। তার সঙ্গ সবাই উপভোগ করতেন। একসময় সেনানিবাসে কবি  “হৈ হৈ কাজী” নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

তরুণ বয়স থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার মাঝেই কাজী নজরুল ইসলাম একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন। সৈনিক হিসেবেও অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন। কবিতা ও গানের মাধ্যমে তার বিপ্লবী মনোভাব প্রতিফলিত হয়। অগ্নিবীণা হাতে বিদ্রোহী হয়ে উঠে আর ধূমকেতুর মতো নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। রচনা করেন বিদ্রোহী কবিতা।

মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তবে তিনি বড় হন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয় বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজন্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করে। পরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত হন।

জীবন মুহূর্তের শেষপ্রান্তে এসে কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ মর্যাদা পান। বাংলাদেশিদের কাছে এখনও তিনি ‘জাতীয় কবি’ নামেই পরিচিত। কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় কবি ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, সিলেটে আসেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। তার মানবিকতা, ঔপেনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহ, ধর্মীয়গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা বোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় এক শত বছর যাবৎ বাঙালির মানসপীঠ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে। তাই পরবর্তী সময়ে তাকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়।

nazrul and bongobondhu

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবার ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।  কবির জন্য ধানমন্ডিতে সরকারি উদ্যোগে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার নাম ছিল ‘কবি ভবন’।  সেখানে কবিকে রাখা হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। 

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে সম্মানসূচক ‘ডিলিট’ উপাধিতে ভূষিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় এবং ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করা হয়।

Link copied!