• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

কেমন ছিল সেই নাহেল, যাকে ঘিরে উত্তাল ফ্রান্স


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৩, ০৯:৫৫ পিএম
কেমন ছিল সেই নাহেল, যাকে ঘিরে উত্তাল ফ্রান্স
ফ্রান্সের একটি শহরে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিহত নাহেলের মা

গত তিন দিন ধরে যাকে ঘিরে উত্তাল ফ্রান্স, কেমন ছিল সেই কিশোর নাহেল।

সতেরো বছরের কিশোর নাহেলের বেড়ে ওঠা প্যারিসের পশ্চিমে নতেঁ শহরে। সেখানে গত মঙ্গলবার গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় এক তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় নাহেল। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো ফ্রান্সজুড়ে গত তিনদিন ধরে চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ আর দাঙ্গা-হাঙ্গামা। একমাত্র সন্তান নাহেলকে বড় করেছেন তার মা। সে কাজ করত পণ্য ডেলিভারির। রাগবি লীগেও খেলত।

নাহেলের পড়াশোনাতেও বিচ্ছেদ আছে। বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হতে চেয়েছিল সে। বাসার কাছাকাছি সুরেসনেসের একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিল।

নাহেল ও তার মা মোনিয়া আলজেরিয়ার বংশোদ্ভুদ। তবে নাহেলের বাবার পরিচয় জানা যায়নি। নাহেলকে যারা চেনেন, তাদের সবারই একই কথা- নাহেল খুব লক্ষ্মী ছেলে ছিল। তবে কলেজের ক্লাসে তার উপস্থিতি ছিল কম। তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই। পুলিশ তাকে চিনত। 

ঘটনার দিন মা যখন কাজে যাবে তখন নাহেল মাকে চুমু দিয়ে বলেছিল, মা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল নটার কিছুক্ষণ পর খবর আসে-প্রাইভেট কার চালিয়ে তল্লাশি চৌকি পার হবার সময় নাহেলকে খুব কাছে থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নাহেলকে হারিয়ে মা মোনিয়া এখন দিশেহারা। তার আর্তনাদ ‘আমি এখন কি করব? আমার সবকিছু তার জন্য উৎসর্গ করেছি। আমার দশটি নয়, একটি সন্তান। সে আমার জীবন, আমার সেরা বন্ধু ছিল। তার দাদি তাকে নরম মনের লক্ষ্মী ছেলে বলতেন।’

এদিকে সোশালিস্ট পার্টির নেতা অলিভিয়ের ফাউর বলেন, নির্দেশ মতো গাড়ি না থামানো মানে এই নয় যে কাউকে হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের সব শিশুর ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।

জানা যায়, গত তিন বছর ধরে নাহেল পাইরেটস অব নতেঁ রাগবি ক্লাবে খেলেছে। ওভালে সিটিয়েন নামের এক সমিতি স্কুলে কিশোরদের জন্য একটি কর্মসূচি পালন করে থাকে। নাহেলও ওই কর্মসূচিতে অংশ নিত।

সিটিয়েনের ওই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়ানো।

নাহেলকে ভালো করে চিনতেন সিটিয়েনের প্রেসিডেন্ট জেফ পুচ। মাত্র কদিন আগেই জেফ পুচের সঙ্গে নাহেলের দেখা হয়েছিল। সব বাধা কাটিয়ে রাগবি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ ছিল জেফ পুচের।

জেফ বলেন, নাহেল এমন একটি ছেলে ছিল, যার মধ্যে সামাজিক ও পেশাগতভাবে উপযুক্ত খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে ওঠার আগ্রহ ছিল। নাহেল অন্য ছেলেদের মত ছিল না, যারা মাদক ও অন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। জেফ কিশোর নাহেলকে অন্যদের কাছে উদাহরণের ছি বলে উওল্লেখ করেন।

নাহেলের মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরই এম্বুলেন্সের চালক মারোয়ান এক পুলিশ কর্মকর্তাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। চালক মারোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, নাহেল ছিল তার ছোট ভাইয়ের মতো। তার মনটা ছিল নরম, সে কখনও কারো গায়ে হাত তোলেনি।

নাহেলের মা মোনিয়া ফ্রান্সের এক টিভিকে বলেন, পুলিশের ওই কর্মকর্তা নাহেলের চেহারা আরবদেশের নাগরিকের মতো দেখতে পেয়ে তার জীবন নিতে চেয়েছিল। নাহেলের মা শুধু ওই ব্যক্তিকে দোষারোপ করছেন, গোটা পুলিশ বাহিনীকে নয়।

পুলিশের গুলিতে নাহেল নিহতের ঘটনায় গোটা ফ্রান্সজুড়ে চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ আর দাঙ্গা। একদিকে চলছে জ্বালাও-পোড়াও অন্যদিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে শতশত বিক্ষোভকারীকে। গত তিনদিনে অন্তত ৯৯৪ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নাহেল হত্যার বিচার চেয়ে ফ্রান্সের আরেকটি শহরে এক তরুণ বলেন-পুলিশের সহিংসতা এখনকার নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে আপনি যদি আরব বা কৃষ্ণাঙ্গ হন।

নাহেল হত্যার ন্যায়বিচার চেয়ে ফ্রান্সের আরেকটি শহরে এক তরুণ বলেন, ‘পুলিশের সহিংসতা এখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে আপনি যদি আরব বা কৃষ্ণাঙ্গ হন।’

নাহেলের পরিবারের আইনজীবী বলেন- বর্ণবাদের বিষয় নয়, এখানকার আইন পুলিশকে সুরক্ষা দেয়। এ কারণে ফ্রান্সে দায় এড়ানোর সংস্কৃতি চালু রয়েছে।

Link copied!