• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
ফ্রান্সে দাঙ্গা

চতুর্থ দিনে গড়াল সংঘর্ষ, লুটপাট: নিয়ন্ত্রণে ৪৫ হাজার পুলিশ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৩, ০৯:৫১ এএম
চতুর্থ দিনে গড়াল সংঘর্ষ, লুটপাট: নিয়ন্ত্রণে ৪৫ হাজার পুলিশ

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেলের নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটিতে বিক্ষোভ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিক্ষোভের চতুর্থ দিনে দাঙ্গা, লুটপাট, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ সামাল দিতে দেশজুড়ে ৪৫ হাজার পুলিশ ও সাঁজোয়া যান নামানো হয়েছে। এছাড়া দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিয়নে টহল দিচ্ছে পুলিশের হেলিকপ্টার।

শনিবার (১ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, হাজার হাজার পুলিশ ও সাঁজোয়া নিরাপত্তা অভিযান থাকা সত্ত্বেও লিয়ন, মার্সেই এবং গ্রেনোবল শহরে কানপাট লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বিক্ষোভের মধ্যেই একটি অ্যাপল স্টোরে লুটপাট চালিয়েছে ফ্রান্সের একদল কিশোর। শুক্রবার পূর্বাঞ্চলীয় স্ট্রাসবার্গ শহরে ঘটে এ ঘটনা। ওই স্টোরটিতে লুটপাট চলাকালীন বেশকিছু ভিডিও এরইমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, অ্যাপেল স্টোরের সামনে অবস্থান করছে একদল কিশোর-কিশোরী। প্রথমে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে ভাঙচুর চালায় দোকানে। একপর্যায়ে, লাথি মেরে দোকানের কাঁচ ভেঙে ভেতরে ঢোকে তারা। এ সময়, দুই ব্যক্তি তাদের থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বিক্ষুব্ধ টিনএজাররা লুটপাট করে দোকানটির দামি সব পণ্য।

একটি ছোট রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, “যে কিশোরটি মারা গিয়েছে, আমি তার জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এটার সঙ্গে আমার ব্যবসা কীভাবে সম্পর্কিত।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরাল্ড ডারমানিন শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরের হালনাগাদ তথ্য রাখছি।”

সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে কিনা— প্রশ্নের উত্তরে ডারমানিন বলেন, “একদম স্পষ্টভাবে বলতে গেলে আমি বলব আমরা কোনো সম্ভাব্য সমাধান এড়িয়ে যেতে চাইছি না। সামনের কয়েক ঘণ্টা আমরা দেখব, তারপর পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যে পন্থা বেছে নেবেন তা কার্যকর করা হবে।”

এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়্যেল ম্যাক্রোঁ।

বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ফ্রান্সে বর্তমানে যা হচ্ছে, তা ‘অগ্রহণযোগ্য এবং অযৌক্তিক’। তবে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার ঘোষণা না দিলেও বিক্ষোভ ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

যে কারণে দাঙ্গা শুরু হলো ফ্রান্সে:

মঙ্গলবার প্যারিসে ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশে গাড়ি থামাতে ব্যর্থ হওয়া ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, কিশোরের নাম নাহেল এম। তাকে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে তা অমান্য করায় গুলি করতে তারা বাধ্য হয়েছে। রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে দেশটির ট্রাফিক পুলিশের গুলিতে নিহতের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আরব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ অফিসার একটি গাড়ির চালকের দিকে বন্দুক তাক করে আছেন। এরপরই একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। গাড়িটি কিছুদূর গিয়ে ধাক্কা খেয়ে থামে। জরুরি বিভাগের লোকজন তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও গুলিবিদ্ধ কিশোর তৎক্ষণাৎ মারা যায়।

বার্তাসংস্থা এএফপি কর্তৃক যাচাইকৃত ফুটেজে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। একজন তার অস্ত্রটি জানালা দিয়ে ড্রাইভারের দিকে তাক করে এবং চালক গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশকে গুলি করতে দেখা যায়। ঘটনার পর পরই উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যুবকটিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সে মারা যায়।

গাড়িতে কিশোরসহ আরও দুজন ছিলেন। একজন পালিয়ে যান এবং অপরজনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঘটনার পর ওই এলাকায় বেশ কয়েক দফা বিক্ষোভ হয়েছে। গাড়ি, ময়লার বিন ও কাঠের গুঁড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

Link copied!