• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স, রাজা তৃতীয় চার্লসের সফর স্থগিত


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩, ১০:০১ এএম
বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স, রাজা তৃতীয় চার্লসের সফর স্থগিত

ফ্রান্স সরকারের ‘পেনশন সংস্কার (অবসরের বয়স বাড়ানো)’ আইনের প্রতিবাদে রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদকারীরা। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়েছে গোটা ফ্রান্স। এরকম পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অনুরোধের যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের রাষ্ট্রীয় ফ্রান্স সফর স্থগিত করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। রোববার (২৬ মার্চ) প্যারিস এবং বোর্দোতে যাওয়ার কথা ছিল ব্রিটিশ রাজার। এ দুটি শহরেই গতকাল বৃহস্পতিবার অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেছেন, “আমরা বিবেকবান নই এবং সাধারণ জ্ঞানের অভাব রয়েছে।”

শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার আবারও রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। আর এ বিষয়টি বিবেচনা করে রাজা তৃতীয় চার্লসের সফর স্থগিত করা হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং রাজা শুক্রবার সকালে ফোনে কথা বলেন। এ ফোন কলের পর ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহামান্যকে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে মেলে এমন সময় স্বাগতম জানানো হবে। এই রাষ্ট্রীয় সফরটির দিন ও তারিখ যত দ্রুত সম্ভব আবারও পুনঃনির্ধারিত হবে।

এদিকে ফ্রান্সে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রাস্তায় নেমেছে দেশটির প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। এতে আহত হয়েছে পুলিশের প্রায় ৫০০ সদস্য। এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ৪ শতাধিক বিক্ষোভকারীকে।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ফ্রান্স জুড়ে দশ লাখেরও বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। এর মধ্যে রাজধানী প্যারিসেই এক লাখ ১৯ হাজার মানুষ অংশ নেয়। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তখনই দক্ষিণ-পশ্চিম শহর বোর্দোতে টাউন হলের সামনের দরজায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ড কিভাবে ঘটেছে এখনও এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দমকলকর্মীরা দ্রুত পৌঁছে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। বিক্ষোভে সারা দেশে ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একজন বিক্ষোভকারী রয়টার্সকে বলেন, “আমি এই সংস্কারের বিরোধিতা করি এবং আমি সত্যিই এর বিরোধিতা করি। গণতন্ত্রের আর কোনো মানে নেই। আমাদের প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে না, তাই আমরা বিরক্ত।”

প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া তথাকথিত ‘ফ্লাশ বল’ বা গ্রেনেডের আঘাতে তিনি তার বুড়ো আঙুল হারিয়েছেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নান্টেস, রেনেস এবং লরিয়েন্টেও সংঘর্ষ হয়েছে।

এর আগে সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ কোনোরকম ভোটাভুটি ছাড়াই ডিক্রি জারির মাধ্যমে অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বছর করে। বিতর্কিত এই পেনশন সংস্কার আইন নিষ্পত্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ বিষয়টি নিয়েই বিক্ষোভ করছেন দেশটির হাজার হাজার নাগরিক।

পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলো ও কয়েকটি ট্রেড ইউনিয়নও সরকারের এই প্রস্তাব নিয়ে একমত হতে পারেনি। গত দুই মাস এ নিয়ে পার্লামেন্টে তুমুল তর্কবিতর্ক হয়েছে, একাধিক ধর্মঘটও হয়েছে দেশটিতে।

একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা আশা ছাড়িনি। এখনো আশা করছি সরকার এই সংস্কার প্রত্যাহার করে নেবে।”

নতুন বিলের অধীনে, ২০২৭ থেকে ফরাসি নাগরিকদের সম্পূর্ণ পেনশন পেতে ৪৩ বছর কাজ করতে হবে, যা বর্তমানে ৪২ বছর।

ফ্রান্সের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমান অনুসারে, অবসরের বয়স দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া এবং পে-ইন পিরিয়ড বাড়ানো বার্ষিক পেনশন অবদানে অতিরিক্ত ১৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউরো যোগ করবে। এই সংস্কারটি প্রয়োজনীয় ও ন্যায্য।

এসব কিছুর পর নিজের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বুধবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, “এই আইন পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। এটা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। চলতি বছরের শেষের দিকে এটি কার্যকর হবে।”

Link copied!