ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেলের নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটিতে ক্ষোভের পঞ্চম দিনে দাঙ্গা, লুটপাট, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ সামাল দিতে হিমমিশ খাচ্ছে দেশটির পুলিশ। বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র মার্সেই শহর। গত রাতে ৭১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার (২ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, কোনোভাবেই শান্ত হচ্ছে না ফ্রান্স। বিক্ষোভ দমাতে গত শুক্রবার সারাদেশে ৪৫ হাজার পুলিশ, বিশেষ ইউনিট, সাঁজোয়া যান এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়্যেল ম্যাক্রোঁ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি অবস্থা জারি করা হবে কি-না এ নিয়েও আলোচনা হয়। তবে এখনই জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের এক মুখপাত্র। এই হত্যাকাণ্ডে জাতিগত বা বর্ণবাদী বিষয় ছিল না বলেও দাবি তার।
এর আগে চরম চাপের মুখে আছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়্যেল ম্যাক্রোঁ। তিনি জার্মানিতে রাষ্ট্রীয় সফর স্থগিত করেছেন। বিভিন্ন সময় পুলিশের বৈষম্যের শিকার হওয়া তরুণ নারী-পুরুষই মূলত বিক্ষোভে নেমেছেন। সহিংসতার অভিযোগে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নাহেলের এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ফ্রান্সে বর্ণবাদী আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ।
ফ্রান্সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জানায়, বিভিন্ন সড়কের ২ হাজার ৫৬০টি স্থানে অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ১ হাজার ৩৫০টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৭৯ জন পুলিশ ও জেন্ডারমেজ।
তবে সিএনএন বলছে, ৫২২ পুলিশ কর্মকর্তা ও জেন্ডারমেজ আহত হয়েছেন। সহিংসতা ও লুটপাট হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ছেলে হত্যার জন্য একজনকে দায়ী করছেন নিহত কিশোরের মা। এদিকে, গতকাল নাহেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
২০০৫ সালের পর ফ্রান্সে এত বড় বিক্ষোভ হয়নি। সে সময় পুলিশ কাছ থেকে পালিয়ে থাকা দুই কিশোরকে হত্যা করা হলে এর প্রতিবাদে প্রায় তিন সপ্তাহ চলে দাঙ্গা। সে সময় জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।
এদিকে ফ্রান্সকে অবশ্যই পুলিশের মধ্যে জাতিগত বৈষম্যের গভীর সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। গত মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে ১৭ বছরের কিশোর নিহত হলে, ফ্রান্সে জাতিগত বৈষম্যের বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে দেশটির ট্রাফিক পুলিশের গুলিতে নিহতের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আরব।
আপনার মতামত লিখুন :