• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অব্যাহতি: নেপথ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৩, ১২:২৩ পিএম
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অব্যাহতি: নেপথ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক

চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে সরিয়ে তার পূর্বসূরি ওয়াং ইকে এই পদে ফিরিয়ে এনেছে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। মঙ্গলবার দেশটির রাবার-স্ট্যাম্প পার্লামেন্টের শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা এ পদক্ষেপের পক্ষে ভোট দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইতোমধ্যে কিন গ্যাংকে অপসারণ ও ওয়াং ই-কে পুনর্বহাল সংক্রান্ত সরকারি আদেশে স্বাক্ষরও করেছেন।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়াং ই-কে অব্যাহতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত কিন গ্যাংকে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিল বেইজিং। তার সাত মাসের মধ্যে এই পদে ফের ফিরে এলেন ওয়াং ই। তবে ঠিক কী কারণে কিন গ্যাংকে অপসারণ করা হলো? এদিকে গত ২৫শে জুনের পর থেকে মোট ২৯ দিন কিনকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয়ও নীরব ছিল - যার ফলে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়।

৫৭ বছর বয়সী কিন গ্যাং ছিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ পদাধিকারীদের মধ্যে অন্যতম। যিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। এর মাধ্যমে মূলত চীন কর্তৃপক্ষের কার্যপদ্ধতির গোপনীয়তার দিকে আবার লোকের দৃষ্টি ফেরায়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাত দিনে চীনের সার্চ ইঞ্জিন বাইদুতে কিনের নামে অনলাইন সার্চের সংখ্যা ৫ হাজার শতাংশ বেড়ে যায়। এ সময় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ছড়ায় তা ছিল- কিনের বিরুদ্ধে টেলিভিশন উপস্থাপক এক নারী সাংবাদিকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত প্রেমের সম্পর্কের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, টিভির সাংবাদিক ফু শিয়াওতিয়ানের সঙ্গে কিন গ্যাংয়ের সম্পর্ক রয়েছে বলে বহু জায়গায় দাবি করা হচ্ছে। তাদের একসঙ্গের ছবিও টুইটারে আসে। তবে গোটা ঘটনা ঘিরে উঠছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে আসা সন্তানের প্রসঙ্গ। যে সন্তান মার্কিন নাগরিক বলেও জানা যাচ্ছে। এ নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি কিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আবার গুজব রয়েছে কিনের স্ত্রী এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট শির কাছে নালিশ করেছেন।

দেশের জনতার সামনে এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা চীনের কমিউনিস্ট সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া কিনকে রাজনৈতিক কোনো কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে - এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এসব গুজব সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, স্বাস্থ্যগত কারণে কাজ থেকে বিরত রয়েছেন কিন। এরপর থেকেই কিনের অবস্থান নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

কিছু চীনা পর্যবেক্ষক বলছেন এই দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা একত্রে চিন্তা করলেই বোঝা যায়, কেন চীনের সদ্যসাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কিংবা কেন তিনি দীর্ঘদিন থেকে ‘গায়েব’ রয়েছেন। প্রথম ঘটনাটি আইন পরিপন্থী না হলেও এটি দলীয় শৃঙ্খলার লঙ্ঘন হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। এরপর আবার স্বাস্থ্যগত সমস্যা তাই হয়তো তাকে নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত।

তবে কারণ যাইহোক চীনে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই এরকম অদৃশ্য হওয়া নতুন কিছু নয়। এদের অনেকেই পরে যখন আবার দৃশ্যমান হন - তখন দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত হচ্ছে। এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেই ২০১২ সালে চীনের নেতা হবার ঠিক আগে আগে দু’সপ্তাহের জন্য অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। তখন তার স্বাস্থ্য এবং কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরকার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির শাসনব্যবস্থার অত্যন্ত অস্বচ্ছ প্রকৃতির হওয়া তাদের নেতৃত্বে আসা-অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়গুলো এবং এর কারণ পূর্ব থেকে নিশ্চিত হওয়া বা ধারণা করা বেশ কঠিন।

Link copied!