• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নিজেকে গুলি করে মারার ৩৬ ঘণ্টা আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৪, ০৩:১৭ পিএম
নিজেকে গুলি করে মারার ৩৬ ঘণ্টা আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি
অ্যাডলফ হিটলার। ছবি : সংগৃহীত

অ্যাডলফ হিটলার গত শতকে বিশ্বরাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত নেতাদের একজন। তাঁর জাত্যাভিমান ছিল প্রবল। জার্মানদের ‘আর্য জাতি’ মনে করতেন তিনি। অর্থাৎ তাঁর মতে, সব জাতির সেরা জার্মানরা। ইহুদিবিদ্বেষ হিটলারের চরিত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য।

১৯৩৯ সালে হিটলারের হাত ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ায় জার্মানি। সঙ্গে ছিল মিত্র ইতালি ও জাপান। তাদের অক্ষশক্তি বলা হতো। প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের জোট মিত্রপক্ষ নামে পরিচিত। এই বিশ্বযুদ্ধে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা দেখে বিশ্ববাসী। ইহুদি নিধনে হিটলারের নৃশংসতা এখনো ভয় জাগায়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিটলার বা মুসোলিনি—কারও পরিণতি সুখকর হয়নি। ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে ও ১৯৪৫ সালের শুরুর দিকে যুদ্ধে চরম কোণঠাসা হয়ে পড়ে অক্ষশক্তি। মিত্রবাহিনীর সেনারা জার্মানিতে ঢুকে পড়েন। বিশেষত ১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে সোভিয়েত সেনাবাহিনী জার্মানির রাজধানী বার্লিন অবরোধ করে ফেলেন।

How Eva Braun‍‍`s Champagne-Soaked Fantasies Fueled A ‍‍`Make-Believe Morality‍‍`  : The Salt : NPR

হিটলার ও মুসোলিনি বুঝতে পারেন পরাজয় অনিবার্য। পরিস্থিতিও দ্রুত বদলে যেতে থাকে। একের পর এক ফ্রন্ট থেকে শুধু পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। ইতালির পতন হলে পালানোর চেষ্টা করেন ফ্যাসিস্ট নেতা মুসোলিনি। তাঁকে আটক করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। দিনটি ছিল ১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল।

মিত্র মুসোলিনির করুণ পরিণতি হিটলারকে ভাবিয়ে তোলে। একসময়ের পরাক্রমশালী হিটলার তখন বার্লিনে নিজের সদর দপ্তরের ২৫ ফুট নিচে বাংকারে জীবন কাটাচ্ছেন। ওই বাংকারে ১৮টি কক্ষ ছিল। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহে নিজস্ব ব্যবস্থাও ছিল সেখানে।

বাংকারে হিটলারের সঙ্গী ছিলেন কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মিত্র, মন্ত্রী ও রক্ষী। যেকোনো সময় সোভিয়েত সেনারা তাঁকেও আটক করবে, এ ভয় তখন হিটলারকে তাড়িয়ে ফিরছে। কিন্তু মুসোলিনির মতো দুর্ভাগ্য বরণ করতে চাননি তিনি।

শেষ রক্ষা হচ্ছে না বুঝতে পেরে আত্মহত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন হিটলার। সেটা বাস্তবায়ন করেন ৩০ এপ্রিল দুপুরের দিকে। বাংকারে নিজের কপালের ডান পাশে গুলি করেন তিনি। কেউ কেউ বলেন নিজেকে গুলি করার আগে বিষ পান করেছিলেন হিটলার। মৃত্যুর পথে সঙ্গী হন স্ত্রী ইভা ব্রাউন। তিনি বিষ পান করে মৃত্যুকে বেছে নেন। তার আগে হিটলার আর ইভা তাঁদের প্রিয় কুকুরকেও বিষ খাইয়ে হত্যা করেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের তথ্য, ওই দিন নাৎসি ইউনিফর্মের জ্যাকেট আর কালো ট্রাউজার পরেছিলেন হিটলার। ইভার পরনে ছিল নীল–সাদা পোশাক। নিজেদের বাংকারে প্রবেশ করার পর দরজা আটকে দেন দুজনে। এরপর হাতে হাত রেখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেন। তখন হিটলারের বয়স ৫৬ বছর। ইভার ৩৩।

এরপর হিটলার ও ইভার মরদেহ বাংকার থেকে বাইরে বাগানে আনা হয়। সন্ধ্যায় অত্যন্ত গোপনে পেট্রল (অনেকে বলেন গ্যাসোলিন) ঢেলে মরদেহ দুটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। সরিয়ে ফেলা হয় হাড়গোড়।

কিন্তু দুজন রক্ষী এ ঘটনা দেখে ফেলেছিলেন। তাঁরা জেনে যান, হিটলার আর বেঁচে নেই। জানার পর বাংকারের রক্ষীরা পালিয়ে যান। হেইনজ এরপর বাংকারে ফিরে গোপনীয় নথিপত্র, রক্তাক্ত কার্পেট, হিটলারের ইউনিফর্ম আর ওষুধ পুড়িয়ে ফেলেন।

Sexuality of Adolf Hitler - Wikipedia

ইভা ব্রাউন ছিলেন হিটলারের দীর্ঘদিনের প্রেমিকা। ইতিহাসবিদেরা বলেন, আত্মহত্যার এক দিন আগে ২৯ এপ্রিল ওই বাংকারেই ইভাকে বিয়ে করেন হিটলার। ছোট্ট সেই আয়োজনে শুধু বাংকারে থাকা ঘনিষ্ঠজনেরা উপস্থিত ছিলেন। হিটলার আর ইভার বিবাহিত জীবন ছিল মাত্র ৩৬ ঘণ্টার।

সময়টা ১৯৪৫ সালের ২ মে, তখনো রক্তক্ষয়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়নি। ওই দিন হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান। একজন সাংবাদিক ট্রুম্যানের কাছে জার্মানির নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলার ও ইতালির নেতা বেনিতো মুসোলিনির মৃত্যুর প্রসঙ্গে জানতে চান।

জবাবে ট্রুম্যান বলেন, ‘এ দুই প্রধান যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না।’ তখন ওই সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এর মানে আমরা সরকারিভাবে জানতে পারছি, হিটলার মারা গেছেন?’ জবাবে ট্রুম্যান ছোট্ট করে শুধু বলেন, ‘হ্যাঁ’। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে, হিটলার আর বেঁচে নেই।

হিটলারের মৃত্যুর দিনটি ছিল ৩০ এপ্রিল, ১৯৪৫ সাল। নিজেকে পরাক্রমশালী নেতা মনে করা হিটলার ওই দিন আত্মহত্যা করেছিলেন।

Link copied!