• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

সিরাজুল আলম খান চির রহস্যের সন্ধানে...


মাহবুব মাহগীর সুহৃদ
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩, ১১:৩২ এএম
সিরাজুল আলম খান চির রহস্যের সন্ধানে...

অন্তিম যাত্রার পথে এখন একাকী যাত্রী সিরাজুল আলম খান। শামসুদ্দিন পেয়ারা লিখিত বই ‌‘আমি সিরাজুল আলম খান বলছি’ বইটি টানা পড়ছিলাম। পড়ার রেশ কাটতে না কাটতেই চিরদিনের জন্য তার প্রস্থান ঘটে শুক্রবার দুপুর ২টার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

প্রবল জনপ্রিয় এই সাবেক ছাত্রনেতার মতো এত আলোচিত ও সমালোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিকে এ দেশে আর দেখা যায়নি। কিন্তু কেন? এর উত্তর সংক্ষেপে দেওয়া এ মুহূর্তে বেশ কঠিন।

ঢাকার কলাবাগানে ভাইদের সঙ্গে উনি বাস করতেন। সে কারণে প্রায় ২৭ বছর আগে সামনাসামনি দেখা হতো, কখনো কথা বলা হয়ে ওঠেনি। এ ছাড়া স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পর ওনাকে দেখেছি।

সাজসজ্জা নয়, সাদা পোশাক পরিচ্ছেদ, লম্বা দাড়ি চুলের সংমিশ্রণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে হয়েছিলেন। এটাকে একটা গুরুগম্ভীর ভাবের ক্ষুরধার প্রকাশ বলা যেতে পারে। এই আলাদা স্টাইলে তিনি কিছুটা ভারতীয় সন্ন্যাসীর এক আধুনিক সংস্করণ হয়ে উঠেছিলেন। শিষ্যরা তাকে ‘দাদাভাই’ বলে সম্মানিত করেছিলেন।

আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সব কটি দেশ, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, এমনকি আমেরিকায়ও রাজনীতিতে ব্লু ব্লাডের সঙ্গে গণমানুষের নেতারা প্রায়ই পেরে ওঠেন না। স্বাধীন বাংলাদেশেও এই ক্ষমতার লড়াইয়ে দুটি পক্ষ হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে শীর্ষ নেতৃত্বের আনুকূল্য না পাওয়ায় নিউক্লিয়াস ভেঙে চুরমার হয়।

চে গুয়েভারা আর ক্যাস্ট্রোর বন্ধুতের আদলে গড়ে উঠেছিল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মতবাদে (ছাত্রলীগ ভেঙে), নতুন ছাত্রলীগ। সেই থেকেই ব্র্যাকেট বন্দি হতে হলো ভাসানী-বঙ্গবন্ধুর গড়া এ স্টুডেন্ট ফ্রন্ট। এ স্লোগানে সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পড়া বা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা তরুণ দল, আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাখিত ও চাকরিচ্যুত মেজর জলিলসহ সেনাবাহিনীর অবহেলিত সিপাহিগণ এবং আরও বিশেষ শ্রেণির মানুষ দলে দলে জাসদের পতাকা তলে ভিড় করেছিলেন নতুন উদ্যমে। অভাব অনটনের দেশে এই নতুন মেরুকরণকে পরবর্তীতে ‘টিম বি’ হিসেবে আখ্যায়িত হতে বেশি সময় লাগেনি।

বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন যাত্রায় অমীমাংসিত এক রহস্য চরিত্র সিরাজুল আলম খান। তার প্রয়াণে শেষ হলো এক ঐতিহাসিক যুগের। তাকে গ্রহণ করা বা বর্জন করা ব্যক্তির ইচ্ছামাত্র। কিন্তু ইতিহাসে তার স্থান অগ্রাহ্য করা এককথায় অসাধ্য। বাঙালির নতুন রাষ্ট্র পাওয়ার লড়াইয়ে অন্যতম ক্ষুরধার তাত্ত্বিক হিসেবে ইতিহাসে তিনি রইবেন ভাস্বর হয়ে।

Link copied!