• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিশুদের হার্টে ছিদ্র হয় কেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম
শিশুদের হার্টে ছিদ্র হয় কেন

মানুষের হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র থাকা মূলত একটি জন্মগত ত্রুটি। গর্ভাবস্থায় শিশুর হৃৎপিণ্ডের বিকাশজনিত সমস্যা কারণে এই ছিদ্র দেখা দিতে পারে।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গিয়ে, বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে আট থেকে নয়জন এই হৃৎপিণ্ডের ছিদ্রজনিত সমস্যায় ভুগে থাকে।

যদি শুরুতেই সমস্যাটি ধরা পড়ে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব। তবে যদি দেরি হয়, জটিলতা তত বাড়ে।

এর চিকিৎসা কেমন হবে, সেটা নির্ভর করে ছিদ্রটি হার্টের কোথায় আছে এবং ছিদ্রটি কত বড়, সেটার ওপর।

হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র
মানুষের হৃৎপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে। ওপরের দুটি হলো অলিন্দ বা অ্যাট্রিয়া ও নিচের দুটি নিলয় বা ভেন্ট্রিকল।

ওপরের দুটি অ্যাট্রিয়া ইন্টারএট্রায়াল সেপ্টাম নামক পর্দা দিয়ে আলাদা করা থাকে এবং নিচের দুটি ভেন্ট্রিকল আলাদা করে রাখে ইন্টারভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাম নামে আরেকটি পর্দা।

শিশুরা হার্টের বিভিন্ন অংশে ছিদ্র নিয়ে জন্মাতে পারে। ওপরের প্রকোষ্ঠের পর্দায় কোনো ছিদ্র থাকলে তাকে অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (এএসডি) বলা হয়। নিচের পর্দার মধ্যে কোন ছিদ্র থাকলে তাকে ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (ভিএসডি) বলে।

এই ছিদ্রের কারণে হার্ট ও ফুসফুসের মধ্যে রক্ত চলাচল অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে।

মানবদেহের ফুসফুস রক্তে অক্সিজেনের জোগান দেয়। আর সেই অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সারা শরীরে পরিবহনের কাজ করে হৃৎপিণ্ড।

শরীরের দূষিত রক্ত মহাশিরার মাধ্যমে প্রথমে হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে প্রবেশ করে তার পর ডান নিলয়ে প্রবেশ করে। এই নিলয় থেকে দূষিত রক্ত ফুসফুসীয় ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়।

ফুসফুস ওই দূষিত রক্তে অক্সিজেনের জোগান দেয়। এরপর ফুসফুস থেকে বিশুদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ডের বাম অলিন্দে প্রবেশ করে এরপর বাম নিলয়ে যায়। হৃৎপিণ্ডের বাম নিলয়ে আসা এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ রক্ত মহা-ধমনীর মাধ্যমে সারা শরীরে প্রবাহিত হয়।


শিশুর হার্টে ছিদ্র কেন হয়
শুরুতেই বলা হয়েছে হৃদপিণ্ডে ছিদ্র হওয়া একটি জন্মগত ত্রুটি। অর্থাৎ শিশু হার্টে ছিদ্র নিয়েই জন্মায়। বাহ্যিক কোনো কারণে হার্টে ছিদ্র হওয়ার নজির নেই।

মাতৃগর্ভে শিশুর হৃৎপিণ্ড একটি নল থেকে বিকশিত হয়, এরপর সেটি চারটি প্রকোষ্ঠে ভাগ হয়। সেই প্রকোষ্ঠের দুটি অংশ আলাদা করতে পর্দা গড়ে ওঠে।

জেনেটিক সমস্যা যেমন: ডাউন সিনড্রোম থাকলে শিশুর হার্টে ছিদ্র দেখা দিতে পারে।

সেই সঙ্গে গর্ভবতী হওয়ার প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে যদি মায়ের রুবেলা হয় তাহলে শিশুর হার্টে ছিদ্র বা হার্টের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি বাড়ে।

মায়ের যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে।

গর্ভকালীন মায়ের ভাইরালজনিত ইনফেকশন হলে।

মা গর্ভকালীন অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগলে।

সেই সঙ্গে মায়ের মদ ও তামাক জাতীয় পণ্য খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এবং বিভিন্ন মাদক সেবনের কারণেও এমনটা হতে পারে।

এ ছাড়া গর্ভবতী থাকাকালীন মা যদি খিঁচুনি প্রতিরোধী ওষুধ, কোলেস্টরেল কমানোর ওষুধ, ব্রণের ওষুধ এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ খেয়ে থাকেন। সেটিও শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এ ছাড়া সুস্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়াও শিশুর হার্টে ছিদ্র দেখা দিতে পারে।


লক্ষণ
শিশু বড় হতে থাকলে তাদের ছুটোছুটি বাড়ে। এতে হার্টের ওপর চাপ বাড়ে। তখন লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।

হার্টের এ ছিদ্র ছোট-বড় হওয়ার ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো কেমন হবে।

যদি ছিদ্র ছোট হয়, তাহলে শিশু জোরে জোরে শ্বাস নেয়, ঘন ঘন কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয় এবং শ্বাসনালীতে ইনফেকশন বা নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
তার সম বয়সী অন্য শিশুদের মতো পরিশ্রম করতে পারে না। সামান্য খেলাধুলা বা ছোটাছুটি করলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শরীর দুর্বল লাগে, ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে পড়ে।
অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন বা এরিথমিয়া, ছিদ্র দিয়ে রক্ত প্রবাহের কারণে হার্ট থেকে মারমার জাতীয় শব্দ বের হয়। বুক ধকধক করতে থাকে, অনেক সময় খালি চোখে বুকের মাংসপেশির লাফানো দেখা যায়।
সব সময় জ্বর বা অসুস্থতা থাকে।
খেতে পারে না, ক্ষুধামান্দ্য।
খাওয়ার সময় ক্লান্ত হয়ে যায়, কান্নাকাটি করে বা অল্পতেই ঘামতে থাকে।
কান্নার সময় দম আটকে যাওয়া।
শারীরিক বৃদ্ধি দেরিতে হওয়া, বয়সের সাথে ওজন না বাড়া।
কাজে বা পড়ালেখায় মনোযোগ থাকে না।
পা, পায়ের পাতা ও পেট ফুলে যায়।

Link copied!