• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

একটি গানের দলের গল্প


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৩, ১০:১৪ এএম
একটি গানের দলের গল্প

‘দ্য এটেম্পটেড ব্যান্ড’ আমার ভীষণ প্রিয়। তারা বাংলাদেশে অন্যরকম এক মিউজিক করে। ড্রামার আরাফাত কাজী তো আছেই বিখ্যাত, তাদের আছে ব্যতিক্রমী নারী ভোকাল। রুশনাফ ওয়াদুদের মত অসাধারণ এক শিল্পী। রুশনাফের ডার্কলিং ব্যানারে একটা বাংলাদেশের গান আছে। অনেকদিন ধরেই আমার ভীষণ প্রিয়। কখনো সময় পেলে শুনবেন। ‘ইনডি’ কাজ, পৌঁছায় নাই সব জায়গায়। তো গানটার লিরিক কী?

ফুটন্ত কেটলির গানে কেটে গেছে বাকী সুর
ছোটবেলার আবছা স্বপ্নগুলো এলোমেলো বহুদূর।

কী চেয়েছিলে মাগো
কী হতে পারোনি
সাত সমুদ্দুর তেরো নদী দেয় কি হাতছানি?
কেউ কি জানে তুমি কত অভিমানী?
এক শাড়ির আঁচলে ভালোবাসা পৌষ অগ্রহানী।

আমি জানি আমি জানি
তোমার চোখের পানি আমি জানি

টিভির শব্দে কান্নার আওয়াজ লুকিয়ে যায়
তেলেভাজা গন্ধে কমদামী সাবান ধুয়ে মিশে যায়।

এরকম গানের লিরিকগুলো এত অসাধারণ। কিন্তু খুব বেশী লোক শুনলো না তাদের। কিন্তু অসাধারণ তাদের সব কীর্তি। আমি করোনার লকডাউন কাটিয়েছি ‘দ্য এটেম্পটেড ব্যান্ড’ শুনে শুনে।

যেমন, নব্বই দশককে তাদের গানে খুব দারুণ ট্রিবিউট দেয়া হয়। ‘ম্যাকগাইভার’ এর সূচনা সঙ্গীত তারা বাজিয়ে মনটাকে মেঘমেদুর করে তোলে। ফকির আলমগীর এর ‘ও সখিনা’ কাভার করে। চন্দ্রবিন্দুর গান কাভার করে ইপিতে ছাড়ে। তাদের লিরিকে থাকে, ‘মাকসুদ বলেছিল প্রেম শুধু আশায় থাকা’ কিংবা ‘জেমসের লাইন চুরি করে তোমাকে লিখি’। তাদের পপ রক গানে আছে, ‘মিলু ভাইয়ের বাসায় চলো’। একটা এমন গান সুকুমার রায়ের সঙ্গে ইংরেজি ‘আর.ই. এম ধারার গান’, ‘উড়ে গেল প্লেন/ পাখি হলো মলিকিউল খন্দকার’। পুরো গানে মনে হবে বিটিভির জীবনে ফেরত আসলাম। আমার কাছে তাদের সেরা গান, ‘দৌড়া পিচ্চি’। এত ভালো প্রেমের গান হয় না। গলায় দলা পেঁকে যায় শুনতে গেলে যখন গায়, ‘নিজেকে ভালোবাসতে শেখা বড়ই কষ্ট/ আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না।’

‘আগুন ও মৌসুমি’ কিংবা ‘এই বিকেলে’ গানগুলো নিয়ে যাবে এক ধরনের নাগরিক বিষন্নতায়। গানের ভেতরে পাবেন, বইমেলা, ক্রিকেট খেলা, আড্ডা, রিকশা, চিঠি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, হারানো সময়। তাদের অনেক গানেই বিদেশি মিউজিশিয়ানদের অংশগ্রহণ আছে। সেটা তাদের মহান করে না, তাদের মূল ফোকাস হলো, স্মৃতিময় অনুভূতির বয়ান আর এস্থেটিক এনিমেশনে ভিডিও। তা অন্তিক মাহমুদের মত কার্টুনে না। তারা কলকাতার ব্যান্ড হলে ঢাকার লোকজন তাদের গান খুব যত্ন করে শুনতো হয়তো। দেশি ব্যান্ড হওয়ার কারণে তারা এখনো আন্ডাররেটেডই।  তাদের ‘বৃষ্টির ওপারে’ গানের লিরিক দিয়েই শেষ করি—

আমার নাম নিও না
আমি কারোর কেউ না
মেঘজুড়ে চেয়ো না
অন্ধকারের পথ ফিরিয়ে

ভেসে যাই আকাশে
তোমাদের গল্পের পাশে
আমাদের ইতিহাসে
শেষ খণ্ড লিখতে হবে।

Link copied!