• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চিরদিনের ‘সুপারস্টার’ রাজেশ খান্না


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম
চিরদিনের ‘সুপারস্টার’ রাজেশ খান্না
রাজেশ খান্না

এফডিসির পরিচালক ইবনে মিজানের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ টেলিভিশনে জাফর ইকবালের সিনেমা ‘এক মুঠো ভাত’ দেখে খুব খুশী হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবতাম এত দারুণ চিন্তা কিভাবে সম্ভব? গানগুলোও সুন্দর। পরে পাশের বাসার ডিসের লাইনের কল্যাণে জানলাম, সিনেমাটা রাজেশ খান্নার ‘রোটি’ সিনেমার ফ্রেম টু ফ্রেম কপি। খুবই বেদনাহত হওয়ার দিন। তবুও অবশ্য আমার জাফর ইকবাল প্রীতি ভাটা পড়েনি। সিনেমায় জাফর ইকবালের যে অভিনয়, নায়িকাদের সঙ্গে কথা বলার সময় যে বাচনভঙ্গি তা আমার খুব পছন্দ ছিল অনেকদিন। নিজে বাল্যকালে স্ট্যামারিং থাকার কারণে হয়তো এত ভালো কণ্ঠ শুনে হয়তো ভালো লাগতো। পরে সিনেমা দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম জাফর ইকবালকে ভালো লাগার প্রধান কারণ রাজেশ খান্না। আমার ধারণা জাফর ইকবালও অবচেতনে কিছুটা রাজেশ খান্না হওয়ার চেষ্টা করতেন। অবশ্য আলমগীর কবির অনেক আগেই বলেছিলেন, ‘বাংলা সিনেমার রমরমা থাকবে না যদি কোনোভাবে সহজলভ্য কোনো মাধ্যম আসে হিন্দি ছবি দেখার। কারণ বারো আনা গল্প তো সেখান থেকেই নেওয়া।’ কী মনিষী মানুষ, কত আগেই বুঝে ফেলেছিলেন আমাদের সিনেমার দৈন্য দশা।

দেব আনন্দকে সুপার স্টার বলা হতো না। কারণ ফ্যান ওয়ারশিপ সে যুগে তেমন বেশি ছিল না। অভিনয়, গল্প, গান কিংবা কোনো এক্স ফ্যাক্টরে তার সিনেমা চলেছে। ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সুপারস্টার হলো রাজেশ খান্না। কারণ তিনি সব সময়ই নিজেকে স্টার ভাবতেন। যখন তার সিনেমা চলতো না, তখনও তিনি পারিশ্রমিক দিয়ে কিনেছিলেন এমজি স্পোর্টস কার। তা চালিয়ে আসতেন। তাকে ইন্ডাস্ট্রির কিছু লোকজন বলতেন ফালতু হিরো। যদিও তিনি এসে ছিলেন এক প্রতিযোগিতায় জিতে। চাচা-চাচীর ঘরে মানুষ, আসল নাম ছিল যতীন খান্না, তা হারিয়ে গেল সযত্নেই।

‘রাজ’ সিনেমাকে অনেকে হিট ধরেন। আমার কাছে তার শুরুর দিকের সেরা সিনেমা ‘আরাধনা’। টম অল্টারের মতো লোক এই সিনেমা দেখে ভেবেছিল ভারতে গিয়েই সিনেমা নিয়ে পড়তে হবে। ব্লকব্লাস্টার হিট ভারতে এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নেও। রাভিশ কুমার কী একটা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, সাংবাদিকরা যদি মন্ত্রীদের প্রশ্নই না করতে পারে তাহলে সিনেমার গান ‘বাগো ম্যায় বাহার হ্যায়’ এর মতো গান তো গাইতেই পারে। ‘ইত্তেফাক’ অবশ্য আমার বেশি ভালো লাগেনি। আমার ভালো লেগেছে ‘কাটি পাতাংগ’। ভালো লাগাটা আরও বেড়েছে কবীর সুমনের একটা গান আছে সেই সময়ের জীবন যাপন নিয়ে। ভারি মিষ্টি। গানটা আর খুঁজেই পেলাম না। এ ছাড়া রাজেশ খান্নার আমার সব চাইতে প্রিয় সিনেমা ‘আনন্দ’। এরকম ছবি করাও ভাগ্যের ব্যাপারে। মান্না দের সেই বিখ্যাত গান। আমার এক বন্ধু বলেছিল, এই গান শুনতে শুনতে সাত আট ঘণ্টার জার্নি করা যায়। অমিতাভ বচ্চন আগে অভিনয় করলেও এই সিনেমার আগে কেউ তেমন চিনতেন না। সাধারণ মানুষ তাকে হিরো হিসেবে ভাবা শুরু করে এই সিনেমা থেকেই। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তিনি আরেকটা সিনেমা করেছেন—নামাক হারাম। এর বাইরে আর সিনেমা করেননি। তিনি রিয়েল সুপার স্টার, তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে পছন্দও করতেন না। অমর প্রেম, অনুরোধ, আজনবি, বাবুর্চি এই তিনটা চারটা মোটামুটি প্রিয়। আর কোনো সিনেমাই আমাকে টানেনি।

রাজেশ খান্না হলেন সেই ব্যডবয় লেভেলের সুপার স্টার। লোকজনও এর জন্য দায়ী। তার ফিয়াট গাড়িতেই কতো মেয়ের চুমুর দাগ থাকতো, সে নাই গাড়ি তো আছে। সব চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিতেন সেই সময়, আর নিজের থার্ডক্লাস বন্ধুদের পেছনে তা ভাঙতেন। তার সব চাইতে প্রিয় দুই বন্ধু অবশ্য খুবই ব্যস্ত মানুষ। কিশোর কুমার ও আর ডি বর্মণ। ফ্রেন্ডশিপ হোক আর যে কারণেই হোক ত্রিরত্নের এক সঙ্গে কাজগুলো দারুণ হিট। আমি অসংখ্য দিন রাতে বাসায় এসে শুধু রাজেশ খান্নার লিপে যাওয়া হিট গানগুলোই শুনি। অসাধারণ লাগে। অনেকে অমিতাভ বচ্চনের মদ খাওয়ার অভিনয়ে গানের ভক্ত, আমার ভালো লাগে রাজেশ খান্নার। তিনি আসলেই ড্রাংক হয়েই তা অভিনয় করতেন।

রাজেশ খান্না শান্ত শিষ্ট, প্রেমিক, উদাসীন। তিনি উদাস থাকতেন সব সময়, অসংখ্য ভালো সিনেমার প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। অনুরোধে অনেক থার্ডক্লাস সিনেমা করেছেন। বিভিন্ন দশকে নতুন নতুন নারীর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। ডিম্পল কাপাডিয়া বলেছিলেন, রাজেশ খান্নার সঙ্গে সংসার করা ও টিকিয়ে রাখার চেষ্টাই ছিল তার জীবনের সব চাইতে কঠিন সময়। টিনা মুনিম সে আমলের বাচ্চা মেয়ে, তার সঙ্গেও তার উথালপাতাল প্রেম। সে আমলের আসল ক্রেজ তিনি, সব চেয়ে দামি বাড়িতে থাকতেন। তার ট্রেন্ডি শার্ট রাজনীতিবীদ থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ী সবার প্রিয়। মমতাজ, আশা পেরেখ থেকে শুরু করে তিনি কত নায়িকার সঙ্গে কাজ করেছেন। শেষদিকে এসে বাজে সিনেমাও করেছেন। এত কিছুর পরেও তিনি ভারতের সেরা সুপার স্টার। অমিতাভ বচ্চন পর্যন্ত মেনে নেয় তার মহত্ম। প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা।

Link copied!