• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

শুভ জন্মদিন, মাধবী মুখোপাধ্যায়


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩, ১১:০৬ এএম
শুভ জন্মদিন, মাধবী মুখোপাধ্যায়

কেন আমার মালায়লাম সিনেমার ভুবন ভালো লাগে? এক নতুন দক্ষিণের নায়িকার ইন্টারভিউ দেখছিলাম কয়েকদিন আগে। তার নতুন সিনেমা আসবে মালায়লাম ভাষায় একটা, আরেকটা তামিল ভাষায়। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সেন্টে চমৎকার ইংরেজি বলেন। কিন্তু তাকে যখন জিগ্যেস করলো, তোমার ফেভারিট সিনেমা কী? কোন সিনেমা দেখে তুমি ইন্সপায়ার হও? তিনি টেনশন ছাড়া বলে দিলেন, ‘চারুলতা’। যদিও ‘পথের পাঁচালী’ দেখেছেন অনেকবার, তবুও তার মনে হয়েছে চারুলতা সত্যজিতের মাস্টারপিস।

তো সেই নায়িকা বলছিলেন, “কেরালা ফিল্ম ফেস্টিভালে দেখা হয়েছিল, মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মাধবীও কেরালার এক বাচ্চা মেয়ে কীভাবে তার ছবি দেখে চিনে তাকে প্রণাম করতে এসেছে তা দেখে অভিভূত। মাধবী অসুস্থতার কারণে বাংলায় কথায় বলছিলেন। সেই মেয়েটা অনেক কথাই বুঝতে পারছিল না, কিন্তু সে বাংলায় ইমোশন দেখেই বুঝতে পারছে কেন সে গ্রেট এক্ট্রেস।”

এই যে পড়াশোনা, ক্লাসিক দেখা, এটাই আমাদের দেশের কাজ করতে আসা নতুন ছেলেমেয়েদের দেখি না, এমনকি আমরা যারা দর্শক তাদেরও নেই।

পূর্ণেন্দু পত্রী একটা চলচ্চিত্র করবেন বলে ঠিক করলেন। তখন তিনি নায়িকা মাধবী মুখোপাধ্যায়কে নেবেন বলে ভেবেছেনও। প্রতিদিন বাসায় গিয়ে ফিরে আসেন। একদিন দেখা হলো, নায়িকা  জানালেন, “আমি অভিনয় আর করবো না, ব্লক বাটিকের কাজ শিখছি।” তবুও ডিরেক্টর রাজি করালেন অনেক কষ্টে। নায়িকা জানালেন, “আমাকে কদিন সময় দিন, যেটা শিখছি সেটা শেষ করি আগে। আর হাতে প্রচুর ব্যথা, বিশ্রাম নিতে চাই।”

তো সেই যুগ এই যুগ অনেক ব্যবধান। ‘চারুলতা’, ‘মহানগর’ সিনেমা করে তিনি পুরো দুনিয়ায় কালজয়ী হবেন না তো আমরা হবো। সত্যজিৎ তাঁর ড্রেস থেকে শুরু করে কতটুকু এক্সপ্রেশন দেবেন সব ডিজাইন করতেন। ‘নষ্টনীড়’ দাগিয়ে দাগিয়ে পড়িয়েছেন চারুলতা সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনেই। তবে আমার পছন্দের মুভি, ‘মহানগর’। যে একটা ওয়ার্ল্ডক্লাস অভিনয় করেছিলেন তিনি। সত্যজিতের ছবি করেছেন তিনটি, তাতেই চিনিয়েছেন নিজের ক্লাস। প্রেমের গুঞ্জনে যখন কলকাতা রই রই, তখন তিনি সত্যজিতের সিনেমা করা বন্ধ করেন। 

বিজয়া রায়ও নাম প্রকাশ না করে তাকে নিয়ে লিখেছেন। তিনি সবসময়ই ‘মানিক দা’ বলে শ্রদ্ধায় অবনত হন। ‘নায়ক’, ‘অশনিসংকেত’, ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতেও তাকে অ্যাপ্রোচ করা হয়েছিল, তিনি কাজ করেননি। এরকম অদ্ভুত গাটস খুব কম শিল্পীর হয়। অবশ্য বাণিজ্যিক ছবিতেও তিনি অত্যন্ত সফল। উত্তম কুমারের সঙ্গে কিংবা ‘দিবারাত্রির কাব্য’র মত ছবিগুলোতে। ‘কে প্রথম কাছে এসেছি’, ‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাবো’, ‘আমার দিন কাটে না’, ‘আরও দূরে চলো যাই’ এরকম কত দারুণ গান তার লিপে সিনেমায় অমর গেল।

মাধবী মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ের ভেতর আমি একজন আন্তর্জাতিক অভিনেত্রীকে দেখি। যিনি শুধু ভালো অভিনয় না, সেই সময়ে গোটা দুনিয়ার অভিনয় কোন দিকে তার একটা ছাপ আছে। ছোটবেলা থেকেই তিনি থিয়েটার করতেন। বিখ্যাত মানুষদের স্নেহ পেয়েছেন। সত্যজিৎ তাকে ডেকেছেন, প্রথমে এটা বিশ্বাস করতে পারেননি। এত দূরে ট্যাক্সি ভাড়া করে তার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। মায়ের চাপাচাপিতেই গিয়েছিলেন। শুধু সত্যজিৎ কেন? মৃণাল সেনের বাইশে শ্রাবণে কিংবা ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণরেখায় তার যে অভিনয়, তা কিভাবে ভুলি!

মাধবী মুখোপাধ্যায় খুবই আধুনিক একজন মানুষ, মূল্যবোধ অত্যন্ত উঁচু। সিরিয়ালও করেছেন অনেকদিন, যখন করতেন তিনি সিনিয়র বলে বাড়তি ট্রিটমেন্ট চাইতেন না। যেদিন কাজ করবেন, করবেনই। যে স্বামীর থেকে সেপারেশনে গেছেন অনেকদিন আগেই, সেই স্বামীর জন্মদিনে তিনি আগে উইশ করেন, বাসায় যান, দুজনার বাসার দূরত্বও বেশী না। এসব সম্পর্ক সূত্র এবং যাপন শিখতে পারি তাদের থেকে। ৮১ তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা ম্যাডাম। চারুলতা সিনেমায় সেই যে তার দূরবীন সিন শাড়ি পরে, দৃশ্য হিসাবে সেটা বাংলা মুভির সেরাদের একটা।

Link copied!