• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখতে শিক্ষকদের পাশে চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৪, ০৯:৪৭ পিএম
ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখতে শিক্ষকদের পাশে চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ছবি : প্রতিনিধি

রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) গড়তে এখনো অটল বুয়েট শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের চতুর্থ দিন পেরিয়ে, দিন হিসেবে তিন দিনের পরীক্ষায় অংশ নেননি আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা। এদিকে ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করা হয়, আর্জি জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলমান ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট উপাচার্যের কাছে এই আর্জি জানান তারা।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, “আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর সকল শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেন। আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখব যে, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে ভুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র‌্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদের, তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ১১-এর সাবেকুন্নাহার সনি, যন্ত্রকৌশল ০৯-এর আরিফ রায়হান দ্বীপ এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭-এর আবরার ফাহাদকে হারিয়েছি।”

শিক্ষার্থীরা বলেন, “ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি। দেশ এবং বিদেশের নানাপ্রাপ্ত হতে আমাদের বুয়েটের অ্যালামনাইরাও ইতোমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন। আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা এবং আস্থা রাখি। তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাস রুম, প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার যারাই আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, আমরা গত চার বছরে শিক্ষার্থীরা এমনটা কখনো অনুভব করিনি যে তারাও চান পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেই অন্ধকার দিনগুলো ফিরে আসুক। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি এবং কখনোই চাইবেনও না। তারা সব সময়ই আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন। আজ এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের বুয়েটের সকল শিক্ষকদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, তারা যেন এমন সংকটের মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।”

রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের আকাঙ্ক্ষা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূরণ করতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারের ওপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। গত তিন দিনব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি, তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।”

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হন। এর প্রতিবাদে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। এরপর ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ তুলে ছয় দফা দাবি তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের দাবি মেনে নিলে তারা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরবেন।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোর অভিযোগ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটের পুরোকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদধারী ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেওয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ বৈধতা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রিটটি করেন।

ওই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর ফলে দেশে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির আর কোনো বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

Link copied!