• ঢাকা
  • সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৬

পৌষ্য কোটায় পাস মার্ক ছাড়াই ভর্তি, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম
পৌষ্য কোটায় পাস মার্ক ছাড়াই ভর্তি, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : প্রতিনিধি

সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে পৌষ্য কোটা বাতিল করেছে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। তবে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এখনও বহাল রয়েছে এই কোটা। ন্যূনতম পাস মার্ক পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হতে পারছেন পৌষ্য কোটাধারী শিক্ষার্থীরা। ফলে প্রতি বছর চরম বৈষম্যমূলক পন্থায় ভর্তি হচ্ছেন পৌষ্যরা। এমনকি অতীতে ন্যূনতম পাস মার্ক ছাড়াও ভর্তি হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। ফলে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অযোগ্যতার ভারে পরবর্তীতে একাডেমিক ক্ষেত্রেও বিপাকে পড়তে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। এতে সেশনজটের মতো নানা একাডেমিক বিপত্তি সৃষ্টি ও ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সেশনজট নিরসনে মানবিক দিক বিবেচনায় পাস করিয়ে দেন শিক্ষকরা। তাই ‘জিএসটি’র কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এই কোটা বাতিল না করা হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জানা গেছে, ন্যূনতম পাস মার্ক পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন পৌষ্য কোটাধারীরা। ২০২৩-২৪ বর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রাখা হয়। এ ছাড়া ইবির ডি ইউনিটের পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস মার্ক ২৪ নম্বর রাখা হয়। ফলে অন্য বছরের ন্যায় এ বছরও ২৪ ও ৩০ নম্বর পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন পৌষ্য। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতি বছর ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি নিচ্ছেন প্রশাসন। এমনকি ন্যূনতম পাস মার্ক না থাকলে ভর্তি কমিটির মিটিং করিয়ে নম্বর আরও কমিয়ে নিজেদের সন্তানদের ভর্তি করানোর অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ভর্তি কমিটির মিটিং বসিয়ে জোরপূর্বক ভর্তিতে শর্ত শিথিল করা ও পাস না করেও শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

শর্ত শিথিলের জন্য বিগত প্রশাসনের আমলে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বরাবর স্মারকলিপি ও দীর্ঘদিন ধরে কর্মবিরতি করেছেন। এর বিপরীতে তখন পৌষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে তৎকালীন প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নেয়নি। এ ছাড়া শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও শর্ত শিথিলের বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে ২০২৩-২৪ বর্ষে পৌষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য পর্যালোচনা করে চরম বৈষম্যমূলক চিত্র দেখা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা ও আইসিটি সেলের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ সায়েন্স বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর মেরিট পজিশন ছিল ১৮,৭৫২তম (গুচ্ছ পরীক্ষার পজিশন)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে একই বিভাগ থেকে ৪৮,৫৯৮তম পজিশনে থেকেও পৌষ্য কোটায় প্রথম সারির ‘আইসিটি’তে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া মানবিক বিভাগ থেকে সর্বশেষ ৬,০১৩তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে আরেক শিক্ষার্থী ২৬,৮১২তম পজিশন নিয়েও পৌষ্য কোটায় আরেক প্রথম সারির ‘আইন’ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া বাণিজ্য বিভাগ থেকেও সর্বশেষ ৫,০৬৬তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ১৯,৩০০তম পজিশন নিয়েও পৌষ্য কোটায় হিউম্যাস রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এমনকি অন্য সকল কোটার তুলনায়ও সর্বনিম্ন মার্ক নিয়ে পৌষ্য কোটায় ভর্তি নিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

পরবর্তীতে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার কারণে একাডেমিক কার্যক্রমে বেগ পোহাতে হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের সভাপতি। তারা জানান, কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের গুটিকয়েক একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করলেও অনেক শিক্ষার্থীর একাডেমিক পথচলা ভালো হয় না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়। কেউ কেউ রিটেক পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেন না। পরবর্তীতে মানবিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষকরা তাদের পাস করিয়ে দেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পৌষ্য কোটাকে মেধার অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ আখ্যা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “এ পদ্ধতি ২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলাফলের পরিপন্থি। ২৪ ও ৩০ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চরম বৈষম্যমূলক। আমরা অনতিবিলম্বে এই কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। ‘জিএসটি’ কেন্দ্রীয়ভাবে পৌষ্য কোটা রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, সেদিন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। যদি পৌষ্য কোটা বাতিল না করা হয়, তাহলে সেদিন থেকেই আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব। এমন বৈষম্যমূলক নীতিকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”

এদিকে শিক্ষকদের অবস্থান জানতে চাইলে এ বিষয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানান ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কেন্দ্রীয় মিটিংয়ে পৌষ্য না রাখার বিষয়ে সুপারিশ ও প্রস্তাব এসেছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদি জিএসটি না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরাও বাতিল করে দেবো।”

Link copied!