• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রতি মণ ধানে দুই কেজি ‘ঢলতার’ ফাঁদে কৃষক


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩, ০৮:৫১ এএম
প্রতি মণ ধানে দুই কেজি ‘ঢলতার’ ফাঁদে কৃষক

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় কৃষকদের উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করতে ‘ঢলতা’ নামে দুই মণ ধানে চার কেজি ধান ওজনে বেশি দিতে হয়। ফলে প্রতি ধান কাটার মৌসুমে বাজারে কৃষকদের ধান বিক্রি করতে এসে ওজনে ঠকতে হচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি স্থানীয় কৃষকদের পক্ষ থেকে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৩ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ ধান বাজারে বিক্রিও করেছেন। সেই ধান বাজারে বিক্রি করতে এসে স্থানীয় আড়তদাররা ৮০ কেজিতে দুই মণের স্থলে ঢলতা হিসেবে আরও চার কেজি ধান বেশি নিচ্ছেন। কষ্টে অর্জিত ধান ওজনে বেশি নেওয়ায় কৃষকরা নিরুপায় হয়ে মেনে নিচ্ছেন। তবে এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় প্রায় এক ১ হাজার ৫০০ কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি ইউএনওর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, ভোক্তা অধিকার ও কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

কৃষক তালেব আলী, রহমান মিয়া, শুক্কুর আলীসহ আরও অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, দুই মণ করে (৮০ কেজি) প্রতি বস্তা ধান আড়তে নেওয়ার পর পরিমাপের সময় বস্তা দেওয়ার কথা থাকলেও বস্তার পরিবর্তে এক কেজি ও তথাকথিত ‘ঢলতা’ নামে আরও তিন কেজির পাথরসহ মোট চুরাশি কেজি ধান কৃষকদের দিতে হয়। তখন কৃষকরা চক্ষুলজ্জায় প্রতিবাদ করতে পায় না।

উপজেলার জামিরাকান্দা গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, “এক একর জমি আবাদ করে ধান তুলতে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা খরচ হইছে। এক একরে প্রায় ৬০ মণ ধান পাইছি। অহন বাজারে ধান বেচতে আইসাও বিপদে পড়ছি। প্রতি বস্তায় (৮০ কেজি) চার কেজি ধান বেশি দেওয়া লাগতাছে। ৭২০ টাকা মণ হিসেবে ধান বেইচা খরচ তুলাই কঠিন হইয়া পড়ছে। সরকার ধানের ওজন ঠিক কইরা দিলে কৃষকরা বাঁচত।”

উপজেলা কৃষক আন্দোলন ফোরামের সভাপতি মাহমুদুল আহসান বলেন, “এই অনিয়মের প্রতিবাদে আমরা শতাধিক কৃষক এক সপ্তাহ ধরে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কৃষকের স্বাক্ষর নিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।”

নালিতাবাড়ী বাজারের ধান চাল ব্যবসায়ী মেসার্স খালেদ এন্টারপ্রাইজের আব্দুল বাতেন বলেন, কাঁচা ধান হওয়ায় চুরাশি কেজি (প্রতি দুই মণে) হিসেবে ধান কেনা হচ্ছে। কারণ, এই ধান শুকালে ৪-৫ কেজি কমে যায়। তাই বাধ্য হয়েই ধান বেশি নিতে হয়।

নালিতাবাড়ীর ইউএনও খ্রিস্টোফার হিমেল রিছিল বলেন, “প্রতি দুই মণ ধানে চার কেজি ধান বেশি নেওয়ায় কৃষকদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পেয়েছি। আশা করছি স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এর দ্রুত সমাধান করতে পারব।”

Link copied!