রংপুরের বদরগঞ্জে সালিশী বৈঠকে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের মামলায় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামান এই রায় দেন।
রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন জানান, বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হোসেন, তার সহযোগী মহুবুল ইসলাম, চিকনা এনামুলকে ১৪ বছর, মোটা এনামুলকে ৩ বছর এবং সাবেক ইউপি মেম্বার ইলিয়াস, সেকেন্দার মণ্ডল, রউফ মণ্ডল, মজম আলী ও বাবলুকে এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। এছাড়াও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই মামলার বাকি ৪৫ আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশিপুর লিচু বাগান এলাকায় চরিত্রহীনতার অভিযোগ এনে স্থানীয় হাফিজা বেগম হ্যাপি ও সাহিদা বেগমের বিরুদ্ধে সালিশী বৈঠকে তাদের বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে এলে হাইকোর্ট স্বপ্রনোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
পরবর্তীতে হ্যাপী বাদী হয়ে মামলা করলে ৫৪ আসামির বিরুদ্ধে দুই দফায় পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭, ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪২, ১৪৭, ৩২৩, ২২৫, ১১৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু স্বাক্ষ্য ও জেরা এবং তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭, দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৩৫৪ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন।
আদালতের এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট প্রকাশ করলেও খালাস প্রাপ্তদের ব্যাপারে নথিপত্র ঘেটে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তারা।
আদালতে রায় ঘোষণার পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ওই দুই নারী। আদালত থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় হাফিজা বেগম হ্যাপি বলেন, “৯ জনের দণ্ড হয়েছে আর বাকি ৪৫ জন খালাস পেয়েছে। রায়ের পরও আমরা অনিরাপদ। কারণ দণ্ডপ্রাপ্ত এবং খালাস পাওয়া সবাই ক্ষমতাধর। আমি ঠিকভাবে বাড়ি যেতে পারব কি না জানি না। আমাকে তারা মেরেও ফেলতে পারে। সেজন্য সরকারের কাছে নিরাপত্তা দাবি করছি।”
অপর ভুক্তভোগী সাহিদা বেগম বলেন, “আদালতের আদেশ থাকলেও শুধু হ্যাপির বাড়িতে পুলিশ পাহারা দিয়েছে। আমি এখনো নিরাপত্তাহীনতায় আছি। পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাই।”