• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

অদম্য মেধাবী সামির সম্ভাবনার গল্প


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৩, ০৮:২০ এএম
অদম্য মেধাবী সামির সম্ভাবনার গল্প
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান আশরাফুল আলম সামি

সমাজে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নেওয়া মানেই পরিবারের বোঝা—এ প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে  দিয়েছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আশরাফুল আলম সামি (১৮)। মেধাবী সামি বর্তমানে গোপালপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি উপজেলার কাজিবাড়ী গ্রামে। ওই গ্রামের মীর সাজ্জাদ হোসেন ও কাকলী পারভীন বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাত, পা একেবারেই চিকন। মুখ বাঁকা, স্পষ্ট কথা বলতে পারেন না। কিছুটা শ্রবণ শক্তিহীন। সামির জন্ম ২০০৬ সালে। দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকায় হাতের ওপর ভর করে বসে বসে এগিয়ে চলেন। বাবা মীর সাজ্জাদ হোসেন পেশায় গাড়ি চালক। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বর্তমানে তিনিও তেমন একটা কাজকর্ম করতে পারেন না। মা কাকলী পারভীন বেগম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসিতে সামি পেয়েছেন জিপিএ-৫। এ পর্যন্ত তিনটি ট্যালেন্টপুলসহ মোট সাতটি বৃত্তি পেয়েছেন। রান্না-বান্না, ছোট সাইকেল চালানো, ক্রিকেট ব্যাটিং, কেরাম, কম্পিউটার চালানো ও গাছে ওঠায় পারদর্শিতা আছে সামির। এছাড়াও অনলাইনে সার্ভে কাজ করে ৩ মাসে ৮০ হাজার টাকার ওপরে আয় করেও সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সামি।

সামি স্পষ্ট কথা বলতে না পারায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে তিনি খাতায় লিখে বলেন, “আমি আমেরিকান ওয়েবসাইট ফ্রিক্যাশ, সার্ভেজুনকিসহ অন্যান্য সাইটে সার্ভের কাজ করি। এ অনলাইনের আয়ের টাকা দিয়ে একটি ল্যাপটপ, দুটি স্মার্টফোন ও বাসার আইপিএস কিনেছি। স্নাতকোত্তর শেষ করে ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।”

সামির মা কাকলী পারভীন বেগম বলেন, “আমার ছেলে প্রতিবন্ধী। প্রথমে মানুষ নানা কথা বলতো। প্রতিবন্ধী ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে কী হবে? আমি কারও কথায় থেমে যায়নি। নিজের সাধ্যমত ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ছেলেকে নিয়ে ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল। তাই কোলে করে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতাম। আবার যখন ছুটি হতো স্কুল থেকে নিয়ে আসতাম। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে নয়, শুরু থেকেই সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করিয়েছি। ছোট থেকেই ছেলের মেধা স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের মুগ্ধ করত। আমার ছেলেকে নিয়ে এখন সবাই গর্ব করে। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। তারাও কিছু করতে পারে সেটা আমার ছেলে দেখিয়ে দিয়েছে।”

গোপালপুর সূতী ভি এম সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, “তার মা কোলে করে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতো। পরে একাই সাইকেল চালিয়ে আসত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সামির মেধা আমাদের মুগ্ধ করত।”

গোপালপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মানিকুজ্জামান বলেন, “সামি আমার কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ওর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও অনেক মেধাবী ছাত্র। সামি ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।”

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এখলাছ মিয়া বলেন, “ভবিষ্যতে যদি সামিদের জন্য নতুন কোনো সুযোগ সুবিধা থাকে তাহলে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে তাকে অবশ্যই সার্বিক সহযোগিতা করব।”

Link copied!