• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কারাতে প্রশিক্ষণে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে কুড়িগ্রামের মেয়েদের


সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৩, ০৯:০২ এএম
কারাতে প্রশিক্ষণে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে কুড়িগ্রামের মেয়েদের

কুড়িগ্রামে মেয়েদের মধ্যে বাড়ছে কারাতে শেখার প্রবণতা। আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারীরা। এতে উৎসাহ দিচ্ছেন অভিভাবকরাও।

শনিবার (১২ আগস্ট) বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র।

স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে একদল শিক্ষার্থী কারাতের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যেখানে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই বেশি। কক্ষের বাইরে অভিভাবকরা বসে নিজ সন্তানের নানান কৌশল উপভোগ করছেন। প্রতিদিন এখানে সকালে ও বিকেলে পাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসেন কারাতে শিখতে। সকালের থেকে বিকেলে মেয়েরা আসেন বেশি। তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনজন কারাতে প্রশিক্ষক। বর্তমানে ছেলেমেয়ে মিলিয়ে ৬২ জন কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যার মধ্যে মেয়ে রয়েছেন ৩৫ জন।

এখানকার মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে। মানসিকভাবে জোর পেয়ে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তারা।

কারাতে শিখতে আসা কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলে,“আমি এখানে ১ মাস ধরে কারাতে শিখছি। প্রথম দিকে অনেকে অনেক ধরণের মন্তব্য করতো। এসবকে পাত্তা না দিয়ে আমি এখানে নিয়মিত শিখতে আসি। মেয়েরা এখন প্রতিনিয়ত ইভ টিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। নিজের প্রতিরক্ষার জন্য আমার এটি শিখতে ভালো লাগে।”

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনিয়া আক্তার জিশা বলে, “আমি এখানে ৩ বছর ধরে কারাতে শিখছি। শুরুর দিকে ছেলেদের সঙ্গে শিখতে হতো। এখন অনেক মেয়ে আসে শিখতে। বিষয়টি সত্যি ভালো লাগার। আমি কারাতে প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায় থেকে ব্ল্যাকবেল্ট পেয়েছি। নিজের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য এটি শেখা খুবই প্রয়োজন।”

আট বছরের ছোট্ট শিশু ফারাহ হাসান সিয়াম বলে, “আমি প্রতিদিন বিকেলে বাবার সঙ্গে এখানে আসি কারাতে শিখতে। কারাতে শিখতে খুব ভালো লাগে।”

মো. মুরাদ নামের এক অভিভাবক বলেন, “আমাদের দেশটা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এই জেলার মেয়েরা আত্মরক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে এটা ঠিক না। একজন দায়িত্বশীল বাবা হিসেবে প্রত্যেকের উচিৎ নিজেদের মেয়েকে কারাতে প্রশিক্ষণে দেওয়া।”

রেশমা আক্তার নামের আরেক অভিভাবক বলেন, “আমি একজন সচেতন মা হিসেবেই আমার মেয়েকে কারাতে প্রশিক্ষণে দিয়েছি। তিন বছর ধরে শিখছে সে। এখন মেয়ের সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে যেকোনো জায়গায় যেতে পারি। নিরাপত্তাহীনতার ভয়টা আর কাজ করে না।”

কুড়িগ্রাম কারাতে ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রশিক্ষক খাজা ইউনুস ইসলাম বলেন, “আমি ৪৫ বছর ধরে কারাতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। কিন্তু মেয়েদের এতে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করিনি। দুই বছর ধরে ক্রমাগত মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে এখানে ৩৫ জন মেয়ে কারাতে শিখছে।”

খাজা ইউনুস ইসলাম আরও বলেন “এখানে আমরা ৩ জন প্রশিক্ষক রয়েছি। শিক্ষার্থীদের দেওয়া ফি দিয়ে চলছে আমাদের বেতন ভাতা। জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে স্থায়ীভাবে আমাদের সম্মানীভাতা দিলে এ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারব। মাত্র একটি কারাতে ম্যাট দিয়ে চলছে আমাদের প্রশিক্ষণ। আরও কিছু কারাতে ম্যাট পেলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হতো।”

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, “কারাতে প্রশিক্ষণে মেয়েদের সংখ্যাটা বাড়ছে, এটা কুড়িগ্রাম জেলার জন্য একটি ভালো দিক। মেয়েদের প্রশিক্ষণ নিতে কারাতে ম্যাটসহ যেসব বিষয়ে সংকট রয়েছে আমরা দ্রুত বিষয়গুলোর সমাধান করবো।”

Link copied!