গত ৯ আগস্ট রাতে রূপলাল রবিদাস (৪৮) ও তার ভাগনি জামাই প্রদীপ লাল রবিদাস (৪৭) ব্যাটারিচালিত ভ্যানে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে তারাগঞ্জের বুড়িরহাট বটতলায় তাদের ভ্যানচোর সন্দেহে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর তাদের দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
রবিদাস পেশায় ছিলেন জুতা সেলাইকারী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর পর এখন ছেলেকে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে।
রূপলালের ছেলে জয় রবিদাস। জয়ের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর গ্রামে। সে তারাগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। বাবাকে হারিয়ে সেই স্বপ্ন থেমে গেছে তার।
একসময় যে চৌকিটা বসে বাবা রূপলাল রবিদাস জুতা সেলাই করতেন, এখন সেখানে বসে জয় জুতা সেলাই করছে।
এখন সংসারের হাল ধরার দায়িত্ব এসে পেড়েছে নবম শ্রেণির ছাত্র জয় রবিদাসের ওপর। বই-খাতার বদলে তার সামনে এখন হাতুড়ি, সুতা আর পালিশের কৌটা।
জয় জানায়, সকাল ১০টায় দোকান খুলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জুতা সেলাই, জুতা রং কাজ করলে ৩০০ টাকার মতো আয় হয়। জুতা বানাতে পারলে আয় আরও বাড়বে। তবে ৩০০ টাকায় কুলায় না। মা, দুই বোন, দাদিসহ তাঁদের পাঁচজনের সংসার এই টাকায় চালাতে টানাটানি হয়।
সুই গেঁথে জুতায় ফোঁড় দিতে দিতে জয় বলে, ‘বাবা কত কষ্ট করত, এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। যখন যেটা চাইছি, কখনো বাবা না করে নাই। এখানে বসে থাকতে কোমর লেগে যায়, পা অবশ হয়ে আসে। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো এই কষ্ট হতো না। আমি স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করতাম। বাবার স্বপ্ন ছিল আমাকে শিক্ষক দেখার। কিন্তু আমি এখন সুই হাতে জুতা সেলাই করছি। উপায় নেই, সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন বাবা। এখন মা, ঠাকুরমা আর দুই বোনকে নিয়ে সংসার চালাতে হবে আমাকে। আমার পড়াশোনা হবে কি না জানি না, তবে দুই বোনকে পড়াতে চাই। পরিবারকে সুখে রাখতে চাই।’
জয়ের মা ভারতী রানী বলেন, ‘ছোট মেয়ে রুপাক ভাত দিলে মাছ চায়। দিবার না পায়া মারছি। কান্না করতে করতে ভাত না খাইয়া ঘুমাইছে। জাগলে তো ফির বায়না ধরবে। কিন্তু ওক মাছ দিব কোনঠে থাকি। ঘরোত খাবার নাই, আমার চিকিৎসা করার টাকা নাই। বেটির বিয়ার খরচপাতি নিয়া খুব দুশ্চিন্তায় আছি। দুধের ছেলেটা স্কুল বাদ দিয়া জুতা সেলাই করোছে। আমার বুকটা ফাটি যাওছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, রূপলালের পরিবারকে কয়েক দিন আগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও সহযোগিতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।