• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছে না চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৪, ০৭:৩৫ পিএম
সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছে না চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা
সবজির দোকান। ছবি : প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম নগরীর পাইকারি ও খুচরা সব বাজারে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছেন না ব্যবসায়ীরা। মাছ, মাংস, খেজুরসহ ২৯টি পণ্যের উৎপাদন খরচ তুলে ধরে তার ভিত্তিতে উৎপাদক, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত শুক্রবার সরকারের কৃষিবিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিমের সই করা এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীতে বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না মাছ-মাংস কিছুই। প্রভাব পড়েনি আলু-ডালের বাজারেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন পাইকারি বাজারে দাম না কমায় নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না এসব পণ্য।

নগরীর পাহাড়তলী কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা হিমেল বলেন, “সরকার সব দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। আমরা সাধারণ মানুষ, ইনকাম করি কম। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে হিমশিম খেতে হবে।”

এই বাজারে মুরগি কিনতে আসা ইয়াছিন বলেন, “বাজারের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। সরকার যদি বাজার মনিটরিং করে, তবে দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে বলে মনে করি।”

সকাল থেকে নগরীর পাহাড়তলী বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে বেঁধে দেওয়া ৯৮ টাকার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। ১০৮ টাকার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়, ১৩০ টাকার মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ৯৩ টাকার খেসারি ১৩০ টাকা, ১৬৫ টাকার মুগডাল ১৭৫-১৮০ টাকা, ৬৬৪ টাকা নির্ধারিত গরুর মাংস হাড় এবং চর্বিসহ ৭৫০ এছাড়া ১০০ গ্রাম চর্বিসহ মাংস ৯০০ টাকা। এক হাজার ৩ টাকা কেজি দরের ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকায়।

সরকার নির্ধারিত মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশের খুচরা দাম ১৮০ টাকা ও কাতলার সর্বোচ্চ দাম ৩৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসব মাছে কোনোটি নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০ টাকায়। বাজারে বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা, রসুন ১২০ টাকা ও আদা ১৮০ টাকা। কাঁচামরিচ ৬০ টাকায় খুচরা বাজারে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। আদা আগের দামে ২০০ টাকা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।

সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ২৮ ও ফুলকপি ২৯ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও শিম ৪৯ টাকা ও আলু ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ২৩ টাকা খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে এ দামে মেলেনি কিছুই। বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়, বেগুন ও শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়।

বাজারে প্রতি কেজি জাহেদি খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম নগরীর সব বাজারে সর্বনিম্ন খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০ টাকা কেজি। সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা হালিতে। এ ছাড়া চিড়ার খুচরা দাম ৬০ টাকা, বেসন ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তবে চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা আর বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।

নগরীর আকবরশাহ বাজারে মাংস বিক্রেতা উসামা বলেন, “চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনি। কিনতে যে টাকা লাগে, সেভাবে আমরা বিক্রি করি। ১০ টাকা লাভ হলে ছেড়ে দেই। এখন হাড়সহ মাংস ৭৫০ হাড় ছাড়া ৯০০ টাকা কেজিদরে মাংস বিক্রি করছি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।”

পাহাড়তলী বাজারে মুরগি বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, “কেনার পরে আমাদের বিক্রি করতে হয়। বেশি দামে কিনে কমে বিক্রি করতে পারব না। কেজিতে ৫-১০ টাকা লাভ হয়। ২০০ টাকা দরে বিক্রি করে আমাদের ১০-১৫ টাকা লাভ হবে।”

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক  মোহাম্মদ ফয়েজ উল্ল্যাহ বলেন, “সরকার নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বিত প্রয়াসে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।”

Link copied!