দেশের উত্তর জনপদের পঞ্চগড়ে চা চাষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল পঞ্চগড় এরই মধ্যে দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
কিন্তু ভরা মৌসুমে বৃষ্টির অভাব আর প্রচণ্ড খরতাপে বাগানগুলোতে চা পাতা ঝলসে গেছে। আবহাওয়ার কারণেই চা পাতার মান ভালো হচ্ছে না; এতে দামও ভালো পাচ্ছেন না বলে জানান চাষিরা।
চা চাষ একবার করে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক লাভের লোভনীয় সুযোগ থাকায় এবারও কৃষি জমিতে চা চাষ করেছেন উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ পাশের ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও দিনাজপুর অঞ্চলের সমতলের চাষিরা।
ভরা মৌসুমী চায়ের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার অভিযোগ করে এক কৃষক বলেন, “আমরা প্রতি বছর একই কথা শুনি। এবারের চায়ের পাতার দাম কম, আগামী বছর বাড়বে। কারখানার সংখ্যা বাড়লে দাম বাড়বে। কিন্তু কারখানা ঠিকই গড়ে উঠছে, আমরা কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছি না।”
কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে প্রতি কেজি পাতা কারখানাগুলো কিনছে ১৪-১৬ টাকা করে। অথচ পাঁচ বছর আগে ২৬-৩৯ টাকায় বিক্রি হতো। সার-কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি ও এবারের খরায় বাড়তি সেটের কারণে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতাতে ১২-১৩ টাকা উৎপাদন খরচ হচ্ছে। প্রতি কেজি চা পাতা তুলতে শ্রমিকদের দিতে হয় ৩ টাকা। পাশাপাশি কারখানাগুলো নানা অজুহাতে কাঁচা চা পাতার প্রকৃত ওজন থেকে ২০-৩০ শতাংশ কর্তন করে। একদিকে দাম কম, অন্যদিকে ওজনে ঠকে তারা লোকসানে পড়ছেন।
চা চাষি হাসান আলী বলেন, “আমাদের বার্ষিক যে খরচ হয়, আমরা সেটিই উঠাতে পারছি না, এর মধ্যে আবার আমাদের লোকসান পোহাতে হচ্ছে। ফলে ব্যক্তিগতভাবে আমি এতটা লোকসানে আছি যে আমি বাগান তুলে ফেলব না রাখব, তা নিয়েও হতাশায় রয়েছি।”
দুই দশকে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে গড়ে উঠেছে সাড়ে ৭ হাজার ছোট-বড় চা বাগান। জেলায় অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা।
আবহাওয়ার কারণে মানসম্মত পাতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে পঞ্চগড় তালমা টি-এর ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, চা চাষিরা বিভিন্ন কারখানায় পাতা সরবরাহ করতেও পারছে না।
সবুজ চা পাতার দর নিয়ে চাষিদের কথা স্বীকার করে পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, আগামী দুমাসের মধ্যে চায়ের অকশান মার্কেট চালু হবে; তখন সমস্যা কেটে যাবে।
চা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও দিনাজপুরে চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে চা চাষ করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :