বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় বরিশাল নগরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকে নগরের রাস্তাঘাটে লোকজনের উপস্থিতি কম দেখা যায়। যানবাহন চলাচলও কম ছিল। সকালে নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
তবে বৃহস্পতিবার নগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হলেও তা হয়নি। আজ খুলনা থেকে বিজিবি সদস্যরা বরিশালে পৌঁছাবে।
জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, খুলনা থেকে ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য আজ যেকোনো সময় বরিশালে পৌঁছাবে।
একই সঙ্গে বিভাগের দুই জেলা থেকে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বরিশালে আনা হয়েছে। তারা বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে সদরের ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বিজিবি ও অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা থেকে ১০ প্লাটুন বিজিবি আসছে। এ ছাড়া পিরোজপুর ও পটুয়াখালী থেকে ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসেছেন।
সদরের ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটি বলেছে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের আইনের মাধ্যমেই মোকাবিলা করা হবে। এ ঘটনায় সংগঠনটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংগঠনের সভাপতি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের জরুরি সভা হয়। পরে রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরিশাল সদরের ইউএনওর বাসভবনে সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, ‘আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বরিশালের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায় সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে ইউএনও কীভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের দ্বারা হেনস্তা হয়েছেন।
তার বাসায় হামলা করা হয়, যেখানে তার করোনায় আক্রান্ত অসুস্থ মা–বাবা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে এ কর্মকর্তাকে গালাগাল করা হয়।
তার বাড়ির ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা হয়েছে। তার চামড়া তুলে নেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে স্লোগান দিয়ে মিছিল করা হয়েছে।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অত্যন্ত আস্থাবান এবং তার লালিত দেশপ্রেমের চেতনা ধারণ করে কাজ করছেন।
অ্যাসোসিয়েশন বলছে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকবেন। আইনের শাসনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর যে অভিপ্রায়, সে ব্যাপারে তারা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো পরিস্থিতিতেই তারা সেই পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না।
এদিকে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলাতেই সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার ইউএনও মুনিবুর রহমান একটি মামলা করেন। মামলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭০ থেকে ৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জামাল পৃথক আরেকটি মামলা করেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রকে দুটি মামলায়ই প্রধান আসামি করা হয়েছে। মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ মিঞা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও তার দায়ের করা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেন, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের পক্ষে লাগানো ব্যানার ও ফেস্টুন রাতের আঁধারে ছিঁড়ে ফেলায় বাধা দিতে গেলে বুধবার রাতে তার সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। তবে আওয়ামী লীগের দাবি, এ সময় তাদের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ওরফে বাবু, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে ফিরোজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি অলিউল্লাহ অলি প্রমুখ।