• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

পদ্মা ও যমুনার পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১, ১১:৫০ এএম
পদ্মা ও যমুনার পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল

টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে পাবনায় পদ্মা ও যমুনা নদীতে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি, হুরাসাগর, গুমানি, চলনবিলসহ বেশ কিছু নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের পদ্মা নদীতে বিপৎসীমার মাত্র ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিদিনই বেড়ায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা ও যমুনার তীরবর্তী নিচু এলাকাতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই পানি প্রবেশ করছে নিচু এলাকাতে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে উঠতি নানা ধরনের শবজি ও ফসলের ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে তীরবর্তী জনসাধারণ। অনেকেই ইতিমধ্যে বাড়িঘর সড়াতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। অনেকের মধ্যেই সহায় সম্বল হারানোর উৎকণ্ঠা কাজ করছে। 

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পয়েন্টে পানির উচ্চতা এখন ১৪ দশমিক শূন্য ৯ মিটার। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ২৫ মিটার। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল খালেক জানান, যমুনা নদীতে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে পানির স্তর ছিল ১০ সেন্টিমিটার। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। উজানের ঢল, অতিবৃষ্টি আর বন্যার পানি এভাবে বাড়তে থাকলে সামনে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন করে ঈশ্বরদী উপজেলার আড়মবাড়িয়া পাল পাড়ায় নিমাই রায়, হরিপদ ও গোপালপুরের নিজাম উদ্দিন, হুজুর আলীর বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের চরকামালপুর, বিলকাদা, চরকুড়লিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় ফসলি জমিতে পানি প্লাবিত হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে যমুনা নদীর বেড়া অঞ্চলের নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন ইউনিয়নের পূর্বশ্রীকণ্ঠদিয়া, চরশাফুল্লা, খয়েরবাগান বাজারসহ চর এলাকার চার শতাধিক মানুষ। সুজানগরের নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের খলিলপুর, চরখলিলপুর এবং কালিকাপুর এলাকায় অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি ও জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন ভ‚ক্তভোগীরা। এছাড়া পাবনা সদরের আশ্রতোষপুর, বলরামপুর ও রানীনগর ভাঙনকবলিত এলাকা। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই সব এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছেন। শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।  

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল লতিফ জানান, গত তিন দিনে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা, সাঁড়া, পাকশী ও সাহাপুর ইউনিয়নের কিছু এলাকার ২৫৫ হেক্টর জমির মুলা, মিষ্টি কুমড়া, করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, ৩৫ হেক্টর মাসকালাই, ৩৪ হেক্টর আখ ও ২০০ হেক্টর জমির কলার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা এলে তাদের সহযোগিতা করা হবে। 

পাবনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, এখনো ত্রাণসহায়তা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মানুষ যার যার বাড়িতেই অবস্থান করছেন। যখন অন্য জায়গায় আশ্রয় নেবে তখন মূলত ত্রাণসহায়তা দেওয়ার দরকার হয়। তারপরও উপর থেকে বাজেট পেলে পানিবন্দি ও নদীভাঙনকবলিত এলাকায় ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে। 

Link copied!