• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩০, ১৬ রজব ১৪৪৬

নগরবাড়ি নৌবন্দর : বর্ধিত সময়েও কাজ সম্পন্ন অনিশ্চিত


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১, ০১:৫২ পিএম
নগরবাড়ি নৌবন্দর : বর্ধিত সময়েও কাজ সম্পন্ন অনিশ্চিত

পাবনার নগরবাড়িতে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ। অধিগ্রহণকৃত জমিদাতারা ক্ষতিপূরণের অর্থ না পেয়ে নেমেছেন আন্দোলনে। বর্ধিত মেয়াদেও বন্ধ থাকা প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে নৌপথে পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়াতে পাবনার নগরবাড়িতে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের নদীবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর পাড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ‘নগরবাড়িতে আধুনিক সুবিধাদিসহ নদীবন্দর নির্মাণ’ শিরোনামে তিন বছর মেয়াদি এই মেগা প্রকল্পের মেয়াদ গত বছর জুনে শেষ হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের সময়কাল এক বছর বৃদ্ধি করে সরকার। সেই সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। আগের বাজেটের সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। 

এদিকে জমিদাতাদের আন্দোলেনে কাজের অগ্রগতি থমকে গেছে। গত তিন বছরে ক্ষতিপূরণের একটি টাকাও পাননি বলে আন্দোলনে নেমেছেন তারা। ফলে প্রকল্পের সব ধরনের কাজ গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, প্রকল্পের জন্য মোট ৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হলেও তা ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে না। প্রকল্পের লোকজন জোর করে জমি দখলে নিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনে নামতে হয়েছে তাদের। বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন করে তারা প্রতিকার চেয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক ও পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকউল্লাহ বলেন, “কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অধিগ্রহণ করা মোট ৩৬ একরের মধ্যে ২৮ একর জমিই ৬০ থেকে ৭০ জনের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তারা কেউই ক্ষতিপূরণ পাননি।” 

নগরবাড়ির রঘুনাথপুরের বাসিন্দা আরশেদ আলী শেখ বলেন, “আমাদের পরিবাবের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ৭২ ডেসিমেল জমি বন্দরের নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের ফসল নষ্ট করে, গোডাউন ভেঙে মাটি ভরাট কাজ করেছে। কিন্তু একটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়নি।” 

একই এলাকার আমির হোসেন, মোহাম্মদ রওশন, দেলোয়ার হোসেন, শাহীন শাহ, আব্দুল কুদ্দুসসহ বেশ কয়েকজন জমিমালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে জমি দখলে নেওয়ায় আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। নদীপাড়ের এ জমিগুলো গুদাম ভাড়া, ফসলাদি আমাদের আয়ের একমাত্র পথ। কিন্তু কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করেই ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই সব জমি মালিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষতিপূরণ না পেলে প্রাণ গেলেও কাজ করতে দেওয়া হবে না।”

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর নতুন বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান জানান, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে পাবনা জেলা প্রশাসনের কাছে ভূমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা হিসেবে ৯০ কোটি টাকা হস্তান্তর করেছে। বিআডব্লিউটিএর ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের এখতিয়ার নেই, নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

কাজ বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান বলেন, “লকডাউনের কারণে কাজ স্থগিত ছিল। শিগগিরই কাজ শুরু হবে এবং নির্ধারিত নতুন সময় সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।”

জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি, রাজস্ব) আফরোজা আক্তার জানান, পাবনা আদালতে বরিশালের বাকেরগঞ্জের থানাপাড়া গ্রামের মরহুম মহিম চৌধুরীর ছেলে পরিচয়ে তারেক চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি অধিগ্রহণকৃত পুরো জমির মালিকানা দাবি করে মামলা দায়ের করায় ক্ষতিপূরণ প্রদান স্থগিত রয়েছে। মামলায় তারেক চৌধুরী দাবি করেছেন, তার পূর্বপুরুষ রঘুনাথপুর গ্রামে বসবাস করতো এবং নির্মাণাধীন নতুন বন্দর যে জমিতে তৈরি হচ্ছে তা তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। কেবল আদালতের আদেশ পেলেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী স্বপন বলেন, “প্রকৃত মালিকরা অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাউকে ঠকিয়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশের মানুষের কল্যাণে ভালো কাজ করা সম্ভব নয়। তাই যাদের প্রাপ্য তারা অবশ্যই পাবেন।”

Link copied!